স্থির বিদ্যুতের ব্যবহার(Use of Static Electricity)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পদার্থবিজ্ঞান স্থির বিদ্যুৎ(Static Electricity) | - | NCTB BOOK
762
762

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, কলকারখানা, ল্যাবরেটরি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল সব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করি, তবে প্রায় সব জায়গাতেই সেটা হয় চলবিদ্যুৎ (পরের অধ্যায়ে আমরা সেটা দেখব) তবে বিশেষ বিশেষ জায়গাতে এখনো স্থির বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়: 

 

 

common.content_added_by

ফটোকপি

330
330

আমরা সবাই কখনো না কখনো কাগজের কোনো লেখার কপি তৈরি করার জন্য ফটোকপি মেশিন ব্যবহার করেছি। এখানে কাগজের লেখার ওপর আলো ফেলে তার একটি প্রতিচ্ছবি একটি বিশেষ ধরনের রোলারে ফেলা হয় এবং সেই রোলারে কাগজের লেখাটির মতো করে স্থির চার্জ তৈরি করা হয়। তারপর এই রোলারটিকে পাউডারের মতো সূক্ষ্ম কালির সংস্পর্শে আনা হলে যেখানে যেখানে চার্জ জমা হয়েছে সেখানে কালো কালি লেগে যায়। তারপর নতুন একটা সাদা কাগজের ওপর ছাপ দিয়ে এই কালিটি বসিয়ে দেওয়া হয়। কালিটি যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য তাপ দিয়ে কালিটিকে আরো ভালো করে কাগজে যুক্ত করে প্রক্রিয়াটি শেষ করা হয়। 

 

common.content_added_by

ভ্যান ডি গ্রাফ মেশিন

602
602

অত্যন্ত উচ্চ বিভব দিয়ে নানা ধরনের কাজ করা হয়। ভ্যান ডি গ্রাফ মেশিনে সেটি করা সম্ভব হয় স্থির বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। একটি ঘুরন্ত বিদ্যুৎ অপরিবাহী বেন্টে স্থির বিদ্যুৎ স্প্রে করা হয়, বেল্টটি ঘুরিয়ে একটি ধাতব গোলকের ভেতর নেওয়া হয়। বেল্টের ওপর থেকে একটা স্পর্শক এই চার্জটা গ্রহণ করে ধাতব সব সময়ই বেশি থেকে কম বিভবে প্রবাহিত হয়। ভ্যান ডি গ্রাফ জেনারেটরে এটি সব সময় ঘটে থাকে, কারণ ধাতব গোলকের ভেতরে সব সময়ই গোলকের সমান বিভব থাকে। বেল্টের উপরের বাড়তি চার্জটুকুর জন্য যে বাড়তি ভোল্টেজ তৈরি হয় সেটি ভাই সব সময়ই গোলকের ভোল্টেজ থেকে বেশি। সে কারণে গোলকের ভেতরে চার্জ থাকলেই সেটা গোলকপৃষ্ঠে চলে যায়। এভাবে বিশাল পরিমাণ চার্জ জমা করিয়ে অনেক উচ্চ পটেনশিয়াল তৈরি করা সম্ভব। 

 

common.content_added_by
common.content_updated_by

জ্বালানি ট্রাক

277
277

পেট্রল বা অন্য জ্বালানির ট্রাক যখন তাদের জ্বালানি সরবরাহ করে তখন তাদের খুব সতর্ক থাকতে হয় যেন হঠাৎ করে কোনো বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়ে বড় কোনো বিস্ফোরণের জন্ম না দেয়। জ্বালানি ট্রাকের চাকার সাথে রাস্তার ঘর্ষণে স্থির বিদ্যুৎ তৈরি হলে এটা ঘটতে পারে, সেজন্য এই ধরনের ট্রাকের পেছনে ট্যাংক থেকে একটা শেকল ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, সেটা রাস্তার সাথে ঘষা খেতে থাকে যেন কোনো স্থির বিদ্যুৎ তৈরি হলে সেটা যেন সাথে সাথে মাটিতে চলে যেতে পারে। 

 

common.content_added_by

ইলেকট্রনিকস

266
266

শীতপ্রধান দেশে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কম থাকে এবং সেখানে স্থির বিদ্যুতের প্রভাব অনেক বেশি। ইলেকট্রনিকসের কাজ করার সময় নানা ধরনের আইসি ব্যবহার করতে হয়। কিছু কিছু আইসি (Integrated Circuit) তাদের পিনে অল্প ভোল্টেজের তারতম্যের কারণেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কাজেই ইলেকট্রনিকসের কাজ করার সময় শুধু হাত দিয়ে স্পর্শ করার কারণেই একটি মূল্যবান আইসি কিংবা সার্কিট বোর্ড নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে কাজ করার জন্য পুরো টেবিলে উপরের অংশ বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ দিয়ে তৈরি ভূমির সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়। একই সাথে যে কাজ করে তার হাতেও বিদ্যুৎ পরিবাহী স্ট্র্যাপ দিয়ে ভূমির সাথে সংযুক্ত রাখা হয় । 

 

common.content_added_by

বজ্রপাত ও বজ্রনিরোধক

405
405

আকাশে মেঘ জমা হবার সময় জলীয় বাষ্প যখন উপরে উঠতে থাকে তখন সেই জলীয় বাষ্পের ঘর্ষণের কারণে কিছু ইলেকট্রন আলাদা হয়ে নিচের মেঘগুলোর মাঝে জমা হতে থাকে। তখন স্বাভাবিকভাবেই উপরের মেঘের মাঝে ইলেকট্রন কম পড়ে এবং সেখানে পজিটিভ চার্জ জমা হয়। মেঘের ভেতর যখন প্রচুর চার্জ জমা হয় তখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার জন্য মেঘের ভেতরে বড় স্পার্ক হয়, যেটাকে আমরা বলি বিজলি চমকানো। মাঝে মাঝে আকাশের মেঘে এত বেশি চার্জ জমা হয় যে সেগুলো বাতাসকে আয়নিত করে আক্ষরিক অর্থে লক্ষ মাইল বেগে মাটিতে নেমে আসে এবং আমরা সেটাকে বলি বজ্রপাত। বজ্রপাতের সময় মেঘ থেকে বিশাল পরিমাণ চার্জ পৃথিবীতে নেমে আসে। বাতাসের ভেতর দিয়ে যাবার সময় সেটা বাতাসকে আয়নিত করে ফেলে, তখন সেখানে প্রচণ্ড তাপ আর আলো আর শব্দ তৈরি হয়ে এই বিশাল পরিমাণ চার্জ যেখানে হাজির হয় সেখানে ভয়ংকর ক্ষতি হতে পারে। 

বজ্রপাতের সময় লক্ষ অ্যাম্পিয়ারের মতো বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে এবং এই বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য বাতাসের তাপমাত্রা 20 থেকে 30 হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে যায়, যেটা সূর্য পৃষ্ঠের তাপমাত্রা থেকে বেশি।এই তাপমাত্রার কারণে আমরা নীলাভ সাদা আলোর একটা ঝলকানি দেখতে পাই। তাপমাত্রার কারণে আরো একটা ব্যাপার ঘটে, বাতাসটুকু উত্তপ্ত হয়ে ফুলে ফেঁপে উঠে বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরের মুহূর্তে বাইরের বাতাস এসে সেই শূন্যস্থান পূরণ করে। পুরো বিষয়টি ঘটে শব্দের গতির চাইতে তাড়াতাড়ি এবং একটি গগনবিদারী শব্দ হয়। বাতাসের গতি শব্দের চাইতে দ্রুত হলে তাকে শকওয়েভ বলে এবং বজ্রপাতের শব্দ একধরনের শকওয়েভ। আলোর ঝলকানি এবং শব্দ একই সাথে তৈরি হলেও আমরা আলোটিকে প্রথম দেখি আলোর গতিবেগ এত বেশি যে সেটা প্রায় সাথে সাথে পৌঁছে যায়। শব্দের গতি 330 m/s এর মতো অর্থাৎ এক কিলোমিটার যেতে প্রায় 3s সময় নেয়। কাজেই আলোর কত সেকেন্ড পর শব্দটা শোনা গেছে সেখান থেকে আমরা বজ্রপাতটা কত দূরে হয়েছে সেটা অনুমান করতে পারি। আনুমানিকভাবে প্রতি তিন সেকেন্ডের জন্য এক কিলোমিটার। 

বজ্রপাতের সময় যেহেতু আকাশের মেঘ থেকে বিদ্যুতের প্রবাহ নিচে নেমে আসে তাই এটা সাধারণত উঁচু জিনিসকে সহজে আঘাত করে। তাই বজ্রপাত থেকে রক্ষা করার জন্য উঁচু বিল্ডিংয়ের উপর ধাতব একাধিক সুচালো মুখযুক্ত শলাকা লাগানো হয়। সেটা মোটা বিদ্যুৎ সুপরিবাহী তার দিয়ে মাটির গভীরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পেছনের বিজ্ঞানটুকু খুবই সহজ। আমরা আগেই দেখেছি চার্জযুক্ত কোনো কিছু চার্জহীন কোনো কিছুর কাছে আনলে সেখানে বিপরীত চার্জ আবেশিত হয়। তাই বজ্রপাত হবার উপক্রম হলে বজ্র শলাকাতে পজিটিভ চার্জ জমা হয় এবং সুচালো শলাকা থাকার কারণে সেখানে তীব্র ইলেকট্রিক ফিল্ড তৈরি করে। সেই ইলেকট্রিক ফিল্ডের কারণে আশপাশে থাকা বাতাস, জলীয় বাষ্প আয়নিত হয়ে যায় এবং আকাশের দিকে উঠে মেঘের নেগেটিভ চার্জকে চার্জহীন করে বজ্রপাতের আশঙ্কাকে কমিয়ে দেয়। অনেক উঁচু বিল্ডিংয়ে যখন বজ্র শলাকা রাখা হয় সেটি প্রায় সময়ই সত্যিকার বজ্রপাত গ্রহণ করে আর বিশাল পরিমাণ চার্জকে সেই দণ্ড নিরাপদে মাটির ভেতরে নিয়ে যায়। আকাশ থেকে নেমে আসা বিদ্যুৎ অনিয়ন্ত্রিতভাবে না গিয়ে এই মোটা তার দিয়ে মাটির গভীরে চলে যাবে। 

সুচালো শলাকায় শুধু যে বজ্রপাত হয় তা নয়, এই সুচালো শলাকা দিয়ে বিপরীত চার্জ বের করে মেঘের মাঝে জমে থাকা চার্জকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। এই কারণে উঁচু বিল্ডিংগুলোতে বজ্রপাত নিরোধক শলাকা লাগানো হলে বজ্রপাতের আশঙ্কা অনেক কমে যায়। 

 

common.content_added_by

স্থির বৈদ্যুতিক রং স্প্রে

662
662

গাড়ি, সাইকেল, স্টিলের আলমারি বা অন্যান্য ধাতব জিনিস রং করার জন্য আজকাল স্থির বৈদ্যুতিক রং স্প্রে ব্যবহার করা হয়। এই স্প্রেগুলোতে রঙের খুবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা তৈরি করা হয় এবং স্প্রে থেকে বের হওয়ার সময় চার্জযুক্ত হওয়ার কারণে একটি কণা অন্যকে বিকর্ষণ করে ছড়িয়ে পড়ে এবং সে কারণে একটা বড় জায়গাকে খুবই মসৃণভাবে রং করা সম্ভব হয়। 

common.content_added_by
common.content_updated_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion