মেয়ের বিয়ে নিয়ে বাবার উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। সমাজ এখনও কালো কিংবা শ্যামলা মেয়েদের পছন্দ করতে চায় না। হাশেম সাহেবের মেয়ে তাহমিনার গায়ের রং কালো হওয়ায় এ নিয়ে পরপর চার বার বিয়ে ভেঙে যায়। তাই তাহমিনা বিয়ের পিঁড়িতে বসার চিন্তা পরিহার করে নারী শিক্ষার উন্নয়নে জীবন উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
অবস্থাপন্ন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান রিফাত ভালোবেসে বিয়ে করে দিনমজুরের মেয়ে আসমাকে। এই অসম বিয়েতে ক্ষুব্ধ হয়ে রিফাতের বাবা ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করে। জীবন-জীবিকার তাগিদে রিফাত একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি নেয়। একদিন চাকরি থেকে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হলে এলাকাবাসী তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। রিফাতের পরিবার তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে কোনো প্রকার দুঃখ প্রকাশ না করে বলে-'এটা তার কর্মের ফল।'
শিক্ষানুরাগী আলী হায়দার একজন আলোকিত মানুষ। অবসর গ্রহণের পর তিনি গড়ে তোলেন 'আলোক বর্তিকা' নামক সেবা সংগঠন। যার মাধ্যমে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক। কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিজের জমানো টাকায় 'আলী হায়দার টেকনিক্যাল কলেজ' স্থাপন করেন। সেখান থেকে বেকার যুবক-যুবতীরা প্রশিক্ষিত হয়ে দেশ-বিদেশে চাকরি করে এলাকাতে সাজনতা। নিয়ে এসেছে।
পিতৃহীন রাশেদার স্বামীর সংসারে মোটেই সুখ নেই। অর্থের জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে মানসিক নির্যাতন করে। গর্ভবতী হওয়া সত্ত্বেও নেশাখোর স্বামী তার গায়ে হাত তোলে। স্বামীর নির্মম অত্যাচারে প্রায়ই সে অজ্ঞান হয়ে যায়। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একসময় রাশেদার প্রতিবাদী নারীসত্তা জেগে ওঠে। নির্দয় স্বামীর কাছে নতি স্বীকার না করে আইনের আশ্রয়ে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে জেলে পাঠায়।
নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী প্রথম নারী নবাব। নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জনহিতকর কাজের জন্য তিনি ইতিহাসে পরিচিত হয়ে আছেন। তিনি ওয়াকফনামা দলিলে উল্লেখ করেছেন "ক্ষণভঙ্গুর মানবদেহ কখন যে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তাহার নিশ্চয়তা নাই। সুতরাং আমার অবশিষ্ট জীবন ঈশ্বরের উপাসনায় পর্যবসিত ও আমার সম্পত্তির উপস্বত্ব ধর্ম ও সৎকার্যে ব্যয় হয় ইহাই কায়মনোবাক্যে সংকল্প ও কর্তব্য মনে করিয়াছি।" তিনি আজ দেহগতভাবে আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু আমাদের হৃদয়ে তিনি আছেন তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে।
ভ্রমণবিলাসী ও প্রকৃতিপ্রেমিক তামিম সাহেব সুযোগ পেলেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে যেতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মেয়ে মাহজাবীন বাসায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। একমাত্র মেয়ের আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। মেয়েকে হারিয়ে তামিম সাহেব আজ নির্বাক, নিখর। প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য তার মনকে এখন আর আকর্ষণ করে না। সবকিছুই যেন আজ বিষাদময়।
অম্বলপুর গ্রাম ও আশপাশে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় গ্রামের লোকজন সন্তানদেরকে তাদের বাপ-দাদার পেশায় নিয়োজিত রাখতে বাধ্য হয়। শিক্ষিত যুবক সাজেদুল বিষয়টি উপলব্ধি করে গ্রামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। গ্রামের মোড়ল কাশেম মিঞা শিক্ষাবিরোধী। কারণ গ্রামের মানুষের সাক্ষরজ্ঞান থাকলে টিপসই নিয়ে জমিজমা দখল নেয়া, ফসল ভাগের ক্ষেত্রে ঠকানো ইত্যাদি বন্ধ হয় যাবে তার। কিন্তু সাজেদুল স্কুল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মহিউদ্দীন আহমদ তার দোকানে ভাইয়ের ছেলে শরীফুলকে ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেন। শরীফুল প্রথম দিকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করলেও ধীরে ধীরে চাচার সর্বনাশের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। দোকানের অন্য কর্মচারীদের সাথে হাত মিলিয়ে বিক্রির টাকা এদিক-সেদিক করতে থাকে। দোকানে প্রচুর বেচা-কেনা হলেও মাস শেষে লোকসান আসে। মহিউদ্দীন আহমদ বিচক্ষণতার সাথে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শরীফুলের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি নিশ্চিত হন। তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে শরীফুলসহ অন্য কর্মচারীদের বিদায় করে দিয়ে দোকানের পূর্বের অবস্থান ফিরিয়ে আনেন।
কেরামত আলী টাকা ছাড়া কিছুই বোঝে না। ।। অধিক মুনাফার আশায় জীবনের জমানো সমস্ত টাকা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জমা রাখে। সেখান থেকে প্রতি লাখে মাসে দুই হাজার টাকা মুনাফা পায়। একসময় এই টাকাই তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠানটি উধাও হয়ে যায়। প্রতারিত হয়ে টাকার শোকে কেরামত আলী পাগল হয়ে পথে পথে ঘুরতে ঘুরতে অকালে মৃত্যুবরণ করে।