নয়া জমিদার আদিলদ্দীন ধরি সকিনারে হাত,
কহিল, চল গো সোনার বরণী, মোর ঘরে মোর সাথ!
পঙ্খী করিয়া পুষিব তোমারে উড়াব আকাশ ভরি,
আমার দুনিয়া রঙিন করিব তোমারে মেহেদী করি।
সকিনা কহিল, আপনি মহান, হতভাগিনীর তরে,
যাহা করেছেন জিন্দেগী যাবে ঋণ পরিশোধ করে।
তবুও আমারে ক্ষমা করিবেন, আপনার ঘরে গেলে,
বসিতে হইবে হতভাগিনীরে কলঙ্ক কালি মেলে।
আসমান সম আপনার কুল, মোর জীবনের মেঘে,
যত চান আর সুরয তারকা সকল ফেলিবে ঢেকে।
বাজারে মিলিটারি ঢোকার পর থেকেই কলিমদ্দি দফাদারের ওপর বোর্ড অফিস খোলার ভার পড়েছে। অপেক্ষাকৃত কমবয়স্ক চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান মিলিটারির ভয়ে পারতপক্ষে এদিকে আসেন না। মেম্বারগণও আত্মগোপন করেছেন। কিন্তু বোর্ড অফিস নিয়মিত খোলার হুকুম আছে। কলিমদ্দি এ কাজ করার জন্য বাজারে আসে। খান সেনারা ওকেই ওদের সঙ্গী করে নেয়। সে সরকারি লোক, নিয়মিত নামাজ পড়ে এবং যা হুকুম হয় তা পালন করে। ……………………………………………………………………………….
কলিমদ্দিকে আবার দেখা যায় ষোলই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাজারের চা স্টলে। তার সঙ্গীরা সবাই মুক্তি, সে-ই শুধু তার পুরনো পোশাকে সকলের পরিচিত কলিমদ্দি দফাদার।
আমার এখন তৈরি হবার সময়।
…….. ………… ………..
বড়ো দীর্ঘকাল আমি অপেক্ষা করেছিলাম
উত্তাল উন সত্ত্বর আমাকে ডেকে এনেছে রাস্তায়
প্রণয়ীর মতো মাটিকে আলিঙ্গনে বেঁধে রাখা চাষ।
তার ঔরসে আমার জন্ম
প্রতিটি কৃষক বিদ্রোহে আমি ছিলাম উলঙ্গ শড়কির হিংসা
পলাশীর আম্রকাননে আমি ছিলাম মীরমর্দনের তলোয়ার
১৮৫৭'র সিপাহী বিদ্রোহে বিদ্রোহীর কার্তুজ
আমি ছিলাম তীতুমীরের বাঁশের কেল্লা
…….. ………… ………..
আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ বিপ্লবের সামনে
এখন আমার আর ফেরার উপায় নেই।
উদরাজপুর একটি ছোট গ্রামীণ বাজার। ফসলের মৌসুমে মানুষের হাতে টাকা থাকে। তখন দোকানগুলোতে ভীড় থাকে। এ সময়ে ভিক্ষুকের আগা-গোনাও বেড়ে যায়। ভিখারির দল বিচিত্র কণ্ঠে গান করে ভিক্ষা চায়। মানুষের মনে দয়া জন্মায়। মানুষ টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করে। কিন্তু স্থানীয় ভিক্ষুকরা এতে বঞ্চিত হবার ভয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে বহিরাগত ভিক্ষুকদের ওপর হামলা চালায়।
দিন কাটিয়া যায়। জীবন অতিবাহিত হয়। পদ্মার ভাঙন-ধরা তীরে মাটি ধসিতে থাকে। পদ্মার বুকে জল ভেদ করিয়া জাগিয়া উঠে চর। অর্ধ শতাব্দীর বিস্তীর্ণ চর পদ্মার জলে আবার বিলীন হইয়া যায়। জেলে পাড়ার শিশুর ক্রন্দন কোনোদিন বন্ধ হয় না। ক্ষুধা-তৃষ্ণার দেবতা, হাসি-কান্নার দেবতা, অন্ধকার আত্মার দেবতা ইহাদের পূজা কোনো দিন সাঙ্গ হয় না।
ট্র্যাজেডি বিয়োগাত্মক সাহিত্য। ট্র্যাজেডিতে মহৎ চরিত্রের পতন ঘটে। 'ইডিপাসে' আমরা দেখি ইডিপাসের পতন। সেটা ছিলো নিয়তি নির্ধারিত। 'ওথেলো' নাটকে নিজের ভুলে স্ত্রীকে অবিশ্বাস করে নিজের নির্মম পরিণতি ডেকে আনে। ওথেলোর অধীনস্থ সৈনিক ইয়াগো তার স্ত্রীর সহযোগিতায় ওথেলোর মনে স্ত্রী সম্পর্কে সন্দেহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করে।