সানজিদা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার বাবা-মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে লোকান্তরিত হন। অসহায় সানজিদা এবং তার ছোটো ভাই সাজ্জাদ তাদের ছোটো চাচা সালামের কাছে আশ্রয় নেয়। কিন্তু তাদেরকে প্রতিপালন করার সামর্থ্য তার নেই। তাদের চাচা অপারগ হয়ে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেশি এক গরিব ও নিরক্ষর ছেলের সাথে সানজিদাকে বিয়ে দেয়। সেখানে শ্বশুর বাড়ির সবাই সানজিদার ওপর অমানুষিক অত্যাচার-নির্যাতন করে। তারা সানজিদার জীবনকে বিভীষিকাময় করে তোলে। একটু স্বস্তির আশায় সানজিদা তার স্বামীকে তালাক দেয়। নেমে যায় জীবন-সংগ্রামে। সে নিজের বাড়িতে থেকে টিউশনি করে নিজের ও ছোটো ভাইয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যায়। বর্তমানে সে বিচারক এবং তার ছোটো ভাই ডাক্তার।
ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে একটি চর জেগেছে। সে চরে আশে পাশের ভূমিহীন অনেক কৃষক বসতি স্থাপন করে। পাশাপাশি তারা যান, শাকসবজি ইত্যাদি চাষাবাদে মনোযোগ দেয়। ধান ও শাকসবজির ব্যাপক উৎপাদন দেখে স্থানীয় ভূমিখেকো জহিরুলের মধ্যে অসীম লোভের সঞ্চার হয়। এক সময় সে ভূমিহীন কৃষকদের তাড়িয়ে দিয়ে চরটিকে দখল করে নেয়। এখন কৃষকদের পাশে দাঁড়ায় যুবক সাইফুল কবির। তিনি সবাইকে তার সাথে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বলেন। এ বিষয়ে তারাও একমত পোষণ করলেন। তারা বললেন, 'আমাদের সাহস আছে। চলুন, আমরা চর উদ্ধার করব।' অবশেষে সকলে মিলে চর উদ্ধার করল।
রুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.এম. (আইন শাস্ত্রে) পাস করেছে। ইতোমধ্যে তার বয়স ছাব্বিশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। সে সরকারি চাকরি পাওয়ার আশায় অনেক পরীক্ষা দিয়েছে। এমতাবস্থায়, ডাক্তার পাত্র অজয়ের সাথে বিশ লক্ষ টাকা পণ ধার্য করে তার বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের দিন রুনার বাবা পণের জন্য পনেরো লক্ষ টাকা জোগাড় করতে সক্ষম হন। কিন্তু বাকি পাঁচ লক্ষ টাকা না দেওয়া পর্যন্ত বিয়ের কাজ সম্পন্ন হবে না বলে জানিয়ে দেন ডাক্তার অজয়ের বাবা। বিষয়টি রুনার ব্যক্তিত্বে আঘাত করে। সে ব্যথিত হয়ে বিয়ে ভেঙে দেয়। স্বাবলম্বী না হয়ে বিয়ে করবে না বলে সে তার বাবা ইন্দ্র বাবুকে জানিয়ে দেয়। বিয়ে ভাঙার ছয় মাস পর রুনা বিচারকের চাকরি পায়।
আমানত কবির গরিব মানুষ। ঢাকা শহরের নিত্তশালী কাদির সাহেবের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। সে চাকরির জন্য কাদির সাহেবের কাছে সহযোগিতা চায়। কাদির সাহেব নয়া-পরবশ হয়ে তাকে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি পাইয়ে দেন। পাশাপাশি বিনা ভাড়ায় তাকে নিজের বাসায় থাকার সুযোগ দেন। কিন্তু দুই বছর যেতে না যেতেই কাদির সাহেবের বাসাটিকে আমানত কবির নিজের বাসা বলে ঘোষণা দেয়। এর কয়েক দিন পর ঘুষ খাওয়ার অপরাধে আমানত কবিরের চাকরি চলে যায়। কাদির সাহেব আবার দয়া করে ভাল-ভাত খেয়ে বাঁচার জন্য আমানত কবিরকে অন্য একটি কোম্পানিতে চাকরি পাইয়ে দেন।
প্রায় দুই বছর আগে প্রকৌশলী সালামের সাথে ডাক্তার সোনিয়ার বিয়ে হয়। স্বামীর উৎসাহ-উদ্দীপনায় ডাক্তার সোনিয়া পরম মমতায় রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেন। তাতে রোগীরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ভাল চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। একদিন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গিয়ে সোনিয়ার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এ কারণে সোনিয়া মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। চিকিৎসা সেবা কিংবা ব্যক্তিগত কোনো কাজেই আর তার মন বসে না। বাস্তবতার চিন্তায় সোনিয়ার বাবা-মা তাকে পুনরায় এক ডাক্তারের সাথে বিয়ে দেন। কিন্তু কিছু দিন পর পরই তার স্বামীর স্মৃতি মনে পড়ে। ফলে প্রায়ই তিনি ভারাক্রান্ত মনে বাসার বারান্দায় বসে থাকেন।
চিতলমারী গ্রামের নারীরা শিক্ষায় অধিকতর পিছিয়ে থাকার কারণে সেখানে বাল্যবিবাহ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বাল্যবিবাহ রোধে ঐ গ্রামের শিক্ষিত ছেলে আবদুল করিম একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত সবাই এ উদ্যোগকে সমর্থন করেন। ফলে আবদুল করিম দ্রুতই গ্রামে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করতে সক্ষম হন।