পরিমল বাবু, গোমেজ বাবু যশোর জেলার মনিপুর গ্রামের বাসিন্দা। বসতবাড়ি ব্যতীত তাদের সামান্য আবাদি জমি রয়েছে। তাদের প্রতিবেশী কৃষকদেরও একই অবস্থা। ফলে সকলেই সাংসারিক খরচ চালাতে হিমশিম খান। যুব উন্নয়ন কর্মীর পরামর্শে পরিমল বাবুর নেতৃত্বে উক্ত গ্রামের কৃষকরা সমবায় সমিতি গঠন করে কৃষি ঋণ পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করলেন। অপরদিকে গোমেজ বাবুর নেতৃত্বে সমবায়ের মাধ্যমে 'ফুল নার্সারি' স্থাপন করে বিভিন্ন কাজে সবাই নিয়োজিত হয়ে গেলেন। এতে অল্প সময়েই তারা আয়ের মুখ দেখতে পেলেন।  

ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে "কৃষি সমবায়” সম্পর্কে আয়োজিত শিক্ষামূলক এক সেমিনারে শিক্ষার্থীরা কৃষি সমবায়ের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পারল এবং প্রতিবেদন তৈরি করে শ্রেণিতে জমা দিল।

সোহাগপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষিশিক্ষা বিভাগের শিক্ষিকা মরিয়ম ম্যাডাম ক্লাসে কৃষি ঋণ সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক দরিদ্র হওয়ায় তাদের কৃষি ঋণ গ্রহণের প্রয়োজন পড়ে। অনেক সময় কৃষকরা গ্রাম্য মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে সর্বসান্ত হয়। কিন্তু কৃষকরা যদি সমবায় গঠন করে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের আবেদন করে তবে ঋণ পাওয়া অনেক সহজ হয়।

ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর গ্রামের কৃষকগণ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন করেন। বাম্পার ফলন হলেও তা ধরে রাখার জন্য বড় গুদাম ঘর বা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র নেই। ফলে তারা কমমূল্যে তাৎক্ষণিকভাবে পণ্য বিক্রয় করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দুই-এক জনের পক্ষে কোনো গুদাম ঘর বা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ে তোলাও সম্ভব নয়। তাই তারা এ সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষি কর্মকর্তার সাথে দেখা করেন। কৃষি কর্মকর্তা সমবায়ের মাধ্যমে এর সমাধান করার পরামর্শ দেন এবং বলেন, “দশের লাঠি একের বোঝা"। তাঁর পরামর্শে কৃষকগণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে লাভবান হন।

রাজাপুর গ্রামের কৃষকগণ দীর্ঘদিন ধরে পানি সেচের অভাবে কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন করতে পারছিলেন না। তাদের এ সমস্যা সমাধানে তারা কৃষি কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ ও সহযোগিতায় তারা 'আশার আলো' নামে সমবায় সমিতি গড়ে তোলেন। আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে সেখানকার কৃষকরা এখন সফল চাষিতে পরিণত হয়েছে।

হাওড় অঞ্চলের চাষিরা এখনও প্রাচীন পদ্ধতিতেই চাষাবাদ করে। এতে তাদের উৎপাদন খরচ বেশি হলেও মোট উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তারা কৃষি সমবায় গঠন করে মূল্যবান 'সমন্বিত ফসল মাড়াই' যন্ত্র ক্রয় করে। এতে তাদের সময়, খরচ, লোকবল সবই কমে গেল এবং উৎপাদনও অনেকাংশে বেড়ে গেল।

পিরোজপুর গ্রামের কৃষকরা গতানুগতিকভাবে একাকী ফসল চাষ করে আসছিলেন। কৃষিতে নতুন নতুন ব্যয়বহুল প্রযুক্তি ও কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় কোন কোন সময় উৎপাদন ব্যয়ও উঠে আসে না। এ অবস্থায় 'সর্বসান্তের মুখে পিরোজপুরের কৃষকরা' শিরোনামে স্থানীয় পত্রিকায় খবর পাঠে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ঐ "গ্রামে এক কৃষক সমাবেশের আয়োজন করে সকলকে সমবায় গঠনের পরামর্শ দেন। বর্তমানে সেখানে কৃষকেরা ঝুঁকিমুক্ত হয়ে লাভের মুখ দেখছে।

'দশের লাঠি একের বোঝা'- এরকম একটি প্রবাদ দেখে নয়নতারা গ্রামের কৃষকেরা একটি সমিতি গঠন করল। এর প্রধান সদস্য জনাব শফিউল্লাহ বলল, 'কৃষি উপকরণ ক্রয়, কৃষিপণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনে এ ধরনের সংগঠন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে'।

রায়গঞ্জ গ্রামের কৃষকগণ পার্শ্ববর্তী গ্রামের কৃষকদের সফলতা দেখে সমবায়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং সমবায়ের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিপণনে আগ্রহী হন। এ জন্য তারা সবাই মিলে আলোচনা করেন। আলোচনায় অভিজ্ঞ কৃষক গণি মিয়া কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিবেচ্য বিষয় সম্পর্কে বলেন। অন্যদিকে অপর অভিজ্ঞ কৃষক সাজু মিয়া কৃষিপণ্য বিপণনে নিরাপদ পরিবহনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বক্তব্য দেন। উক্ত আলোচনা ও সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মতে কৃষিপণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনের মাধ্যমে সফল হন।