তাসফিয়া শীতকালীন ছুটিতে নানাবাড়ি বেড়াতে যায়। সকালে নানুর হাতে বানানো পিঠা খেয়ে সে নানার সাথে ঘুরতে বের হয়। তার নানা এলাকায় বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি। লোকজন বেশ আন্তরিকভাবে তার সাথে কথা বলে। কিন্তু এখানকার মানুষজন মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও এসবের ইতিবাচক ব্যবহার এখনও শিখেনি। এখনও মানুষের মধ্যে অজ্ঞতা, কুসংস্কার বিদ্যমান, যা দেখে তাসফিয়া অবাক হয়।
উদ্দীপকের গ্রামের মানুষেরা মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার করলেও এর ইতিবাচক ব্যবহার এখনও শেখেনি, যা প্রকৃতপক্ষে সাংস্কৃতিক ব্যবধানেরই ফল। আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী অগবার্ন প্রদত্ত 'সাংস্কৃতিক ব্যবধান' তত্ত্বের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি একই গতিতে চলতে পারে না।
অর্থাৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির ফলে বস্তুগত সংস্কৃতি যতো দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায়, অবস্তুগত সংস্কৃতি ততো দ্রুত এগুতে পারে না। ফলে সৃষ্টি হয় সাংস্কৃতিক ব্যবধান বা পিঁছিয়ে পড়া। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নানাবিধ আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের ফলে সমাজের অবস্তুগত দিকের (ধর্ম, শিক্ষা, শিল্পকলা, মূল্যবোধ ইত্যাদি) চেয়ে বস্তুগত দিক (বাসস্থান, হাতিয়ার, তৈজসপত্র, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) দ্রুত গতিতে পরিবর্তন হয়। ফলে বস্তুগত অংশের সঙ্গে অবস্তুগত অংশের ব্যবধান সৃষ্টি হয়। পিছিয়ে পড়া অবস্তুগত সংস্কৃতিকে তখন শূন্যতা বা অসামঞ্জ্যতা মোকাবিলায় তৎপর হতে হয়।
উদ্দীপকের গ্রামের লোকজন মোবাইল, ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও এর ইতিবাচক ব্যবহার এখন শেখেনি। মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি বস্তুগত সংস্কৃতি হলেও এর পরিচালনার কৌশল অবস্তুগত সংস্কৃতি। গ্রামের মানুষ এ ধরনের উন্নত আবিষ্কারের প্রাথমিক ব্যবহার শিখলেও শুরুতেই ইতিবাচক পরিচালনার কৌশল আয়ত্ত্ব করতে পারে না। ফলে বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে তৈরি হয় সাংস্কৃতিক ব্যবধান। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত সামাজিক অবস্থা সাংস্কৃতিক ব্যবধানের ফল।