প্রতিষ্ঠিত প্রকৌশলী ইসতিয়াক আহমেদ গ্রামের ছেলে হলেও ঢাকায় বসবাস করছেন। নিজ গ্রামের ছাত্রদের মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে উন্নততর শিক্ষাদানের জন্য তিনি নিজের নকশায় নিজ খরচে একটি স্কুল নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করেন। কিন্তু শিক্ষকবৃন্দ এসব সরঞ্জামাদি ব্যবহারে প্রশিক্ষিত না হওয়ার কারণে শিক্ষার মান নিম্নমুখীই রয়ে গেল।
ইসতিয়াক সাহেবের প্রতিষ্ঠিত স্কুলের নিম্নমুখী শিক্ষা সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী উইলিয়াম ফিল্ডিং অগবার্ন তার 'Social Change' গ্রন্থে সংস্কৃতির ব্যবধান তত্ত্ব প্রদান করেছেন। অগবার্নের মতে, নানা ধরনের যান্ত্রিক আবিষ্কারের ফলে দ্রুতগতিতে সমাজ পরিবর্তিত হয়। এই দ্রুত পরিবর্তনটি ঘটে বস্তুগত সংস্কৃতি যেমন- ঘর-বাড়ি, হাতিয়ার, যন্ত্রপাতি, তৈজসপত্র, কল-কারখানার পণ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদির ক্ষেত্রে। অন্যদিকে অবস্তুগত সংস্কৃতি যেমন- ধর্ম, সরকার, পরিবার, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরিবর্তনটি বস্তুগত সংস্কৃতির তুলনায় খুবই মন্থর। ফলে উভয় সংস্কৃতির মধ্যে ব্যবধানের সৃষ্টি হয়। এই তত্ত্বের মূল কথা হলো, সংস্কৃতির দুটি অংশের মধ্যে একটি কোনো এক সময়ে অন্যটি থেকে দ্রুত পরিবর্তিত হওয়ার ফলে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া অংশটিকে অগ্রসর অংশটির সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। সংস্কৃতির এক অংশের এই পিছিয়ে পড়া এবং সেই অংশের তা কাটিয়ে ওঠার প্রবণতাই হচ্ছে সাংস্কৃতিক ব্যবধান।
উদ্দীপকের প্রকৌশলী ইসতিয়াক সাহেব নিজের তৈরি করা নকশা দিয়ে গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু স্কুলে ভালো শিক্ষক না' থাকায় লেখাপড়ার মান নিম্নমুখী। এখানে সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্বের প্রয়োগ সুস্পষ্ট। কারণ স্কুল হচ্ছে বস্তুগত সংস্কৃতি যা অতি সহজেই তৈরি করা যায়। কিন্তু স্কুলে পড়ালেখার মান, ভালো শিক্ষক ইত্যাদি অবস্তুগত সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত, যা বস্তুগত সংস্কৃতির মতো দ্রুত তৈরি করা যায় না। ফলে দুই ধরনের সংস্কৃতির মধ্যে দেখা দেয় অসামঞ্জস্যতা।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইসতিয়াক সাহেবের স্কুল তৈরি এবং স্কুলের লেখাপড়ার নিম্নমান সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্বের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।