রবিন ছোটবেলা থেকেই শহরে বসবাস করছে। বাবার সাথে গ্রামে দাদার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে সে দেখল, গ্রামের মানুষেরা সহজ-সরল, মিতব্যয়ী, আন্তরিক, বিনোদনপ্রিয়, শান্তিপ্রিয় ও ধার্মিক। অথচ শহরের মানুষের মধ্যে এর ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।
সংস্কৃতি হলো একটি জাতি বা সমাজের জীবনধারণ পদ্ধতি। আর বাংলাদেশের প্রায় শতকরা ৭৬ ভাগ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। সুতরাং বাংলাদেশের সংস্কৃতি বলতে প্রধানত গ্রামীণ সংস্কৃতিকেই বোঝায়। এ সংস্কৃতির ধরন নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ মূলত সনাতন জীবনধারায় পরিচালিত হয়। অর্থাৎ- গ্রামীণ সমাজে বসবাসকারী মানুষ সুদীর্ঘকাল যাবৎ কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়াই একই ধরনের জীবনযাপন করে। গ্রামীণ অর্থনীতির মূলভিত্তি হলো কৃষি। অধিকাংশ গ্রামবাসী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত। তাদের মধ্যে অধিকাংশরাই এখনও গরু ও লাঙলের সাহায্যে কৃষিকাজ করে। তবে ইদানিং পাওয়ার টিলার এবং অন্যান্য প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি যন্ত্রের ব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রামের মানুষেরা সাধারণত সহজ- সরল হয়ে থাকে। তাদের পোশাক-পরিচ্ছদও সাধারণ। ভাত, মাছ, ডাল শাক-সবজি গ্রামের মানুষের প্রধান খাদ্য হলেও বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে পিঠা, পোলাও, মাংস ও পায়েসের আয়োজন করা হয়ে থাকে। গ্রামীণ সমাজ জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, শহরাঞ্চল থেকে পৃথক প্রকৃতির ঘরবাড়ির ধরন। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে বাঁশ ও বেতের তৈরি বেড়া, বাঁশের খুটি এবং ছন বা খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরের আধিক্য লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজজীবনে বিভিন্ন ধর্মের প্রভাব বহুলাংশে বিদ্যমান। আবহমানকাল ধরেই গ্রামে বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা একত্রে শান্তিতে বসবাস করছে, যা ধর্মীয় সহনশীলতা ও শান্তিপ্রিয়তার সাক্ষ্য বহন করে। উদ্দীপকে দেখা যায়, রবিন তার বাবার সাথে গ্রামে দাদার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গ্রামের মানুষের সহজ-সরলতা, মিতব্যয়ীতা, আন্তরিকতা, বিনোদনপ্রিয়তা, শান্তিপ্রিয়তা ও ধার্মিকতা পর্যবেক্ষণ করলো, পূর্বোক্ত আলোচনা অনুযায়ী যা গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রকৃতিকে তুলে ধরে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতি একইসাথে সনাতন এবং আধুনিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করছে, যা পরিলক্ষিত হয় গ্রামবাসীদের জীবন-জীবিকার সব ক্ষেত্রে।