রতনপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষই অশিক্ষিত। চিকিৎসার জন্য এখানকার মানুষ ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজের ওপরই বেশি নির্ভরশীল। সরকার তাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করে দেয়। কিন্তু গ্রামের মানুষের বেশিরভাগই "আগের চিকিৎসা ব্যবস্থাতেই ভালো হয়"- এই বিশ্বাসে অটল। হাসপাতালের ডাক্তাররা বোঝাতে চাইলেও তারা পুরোনো বিশ্বাস বদলাতে চায় না।
উদ্দীপকে রতনপুর গ্রামের চিত্র যেন অগবার্নের 'সাংস্কৃতিক ব্যবধান' তত্ত্বেরই বাস্তব প্রতিচ্ছবি- বক্তব্যটির সাথে আমি একমত।
বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী উইলিয়াম এফ, অগবার্ন ১৯২২ সালে তার 'Social Change' নামক গ্রন্থে সংস্কৃতির আলোচনায় সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্ব প্রদান করে। তার প্রদত্ত এ তত্ত্বের মূল কথা হলো, আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় সংস্কৃতির সব অংশ একই সাথে বা একই গতিতে অগ্রসর বা পরিবর্তিত হয় না। একটি অংশ দ্রুতগতিতে অগ্রসর হওয়ার ফলে অপর অংশ অনিবার্যভাবে পিছিয়ে পড়ে। সাধারণত সংস্কৃতির বস্তুগত অংশ যেমন- রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, দালানকোঠা প্রভৃতির দ্রুতগতিতে পরিবর্তন বা উন্নয়ন সাধিত হলেও অবস্তুগত সংস্কৃতি যেমন- বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ প্রভৃতি সেই হারে পরিবর্তিত হয়নি।
উদ্দীপকে লক্ষণীয় যে, রতনপুর গ্রামে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার হাসপাতাল (বস্তুগত সংস্কৃতি) তৈরি করলেও মানুষ ঝাড়-ফুক, তাবিজ-কবজের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। তাদের বিশ্বাস (অবস্তুগত সংস্কৃতি) যে আগের চিকিৎসা ব্যবস্থাতেই তারা ভালো হয়। অর্থাৎ, রতনপুর গ্রামে বস্তুগত সংস্কৃতির পরিবর্তন সাধিত হলেও অবস্তুগত সংস্কৃতির ক্ষেত্রে তেমন পরিবর্তন সাধিত হয়নি।
উপরের আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, রতনপুর গ্রামের ক্ষেত্রে অগবার্নের সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্বের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।