তন্ময় পাঠ্যপুস্তক থেকে বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান সম্পর্কে জানতে পারে। উক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি কতকগুলো ছোট পাহাড়ের সমন্বিত রূপ এবং এটি কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত। এটি ৮ম শতাব্দীতে রাজা বুদ্ধদেব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৫৫ সালে খনন কার্যের ফলে আবিষ্কৃত হয়। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহারটিও উক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে অবস্থিত।
উদ্দীপকে প্রদত্ত তথ্য থেকে আমরা বলতে পারি এখানে ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কেননা, ময়নামতি কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত এবং এটি ৮ম শতাব্দীতে রাজা বুদ্ধদেব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রাচীন ইতিহাস হতে জানা যায়, খ্রিষ্টীয় ৯ম-১০ শতাব্দীতে চন্দ্রবংশীয় বৌদ্ধ রাজারা এ সমতট ভূভাগে রাজত্ব করতেন। চন্দ্রবংশীয় রাজাদের মধ্য একজন প্রখ্যাত রাজা ছিলেন মানিক চন্দ্র। মানিক চন্দ্র সম্ভবত পাটিকারা ও মেহেরকূলের রাজা ছিলেন। রাজা মানিক চন্দ্রের স্ত্রী রানী ময়নামতির পুত্র গোবিন্দ চন্দ্র (গোঙ্গীচাঁদ) মেহেরকূল, পাটিকারা এবং বিক্রমপুর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হন। স্বামী মানিক চন্দ্রের দেহত্যাগের পর হতে পুত্র গোবিন্দ চন্দ্রের রাজ্যাভিষেক পর্যন্ত তিনি দীর্ঘকাল মেহেরকূল ও পাটিকারা রাজ্যের শাসনকার্য সুনিপুণভাবে পরিচালনা করেন। ময়নামতি মেহেরকূলের রাজা তিলক চাঁদের সুযোগ্য কন্যা ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলার অন্যতমা মহীয়সী মহিলা ও শিবাবতীর গুরু গোরক্ষণায়ের উপযুক্ত শিষ্যা। তিনি অসাধারণ যোগ্যতাসম্পন্না, মহাজ্ঞানের অধিকারিণী ও অপূর্ব রাজনীতি জ্ঞানসম্পন্না ছিলেন। তার কর্ম ও সাধনাক্ষেত্রের নাম তার পবিত্র নামে চিহ্নিত হওয়াতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, একদা তিনি কী রকম লোকমান্যা ছিলেন। নাথ গুরুদের তথা ময়নামতির গোবিন্দ চন্দ্রের (গোঙ্গীচাঁদ) অবদান অবলম্বনে খুব সম্ভব প্রাচীন যুগেই নাথ-গীতিকা রচিত হয়েছিল। কিন্তু ঐ প্রাচীন সাহিত্য আমাদের নিকট পৌছায়নি। তবে অর্ধ শতাব্দী আগেও কুমিল্লার ময়নামতি অঞ্চলে ময়নামতি গোঙ্গীচাঁদ সম্বন্ধীয় পালাগান গীত হতো। সেখানকার লোকসংগীত অনুযায়ী রাজা গোবিন্দ চন্দ্রের মা রানী ময়নামতির নাম অনুসারে এ স্থানের নাম হয় ময়নামতি।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে প্রদত্ত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি অর্থাৎ, ময়নামতির ৮ম শতাব্দীতে পত্তন হয়।