দৃশ্যপট-১: শিক্ষক ক্লাসে পড়াচ্ছিলেন যে, প্রত্নতত্ত্বের সময়কালের ভিত্তিতে সমাজের শ্রেণিবিভাগ। তিনি বলেন যে, এ যুগের মানুষ আগুনের ব্যবহার, পোশাক পরিধানের শিক্ষা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন যে, সে যুগের উৎপাদন ব্যবস্থা ছিল সংগ্রহমূলক।
দৃশ্যপট-২: শিক্ষক পরের দিন পড়াচ্ছিলেন যে, এ যুগের মানুষ জীবনধারণের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও উপকরণ নিজেরাই উৎপাদন করত। কিন্তু এ যুগে সামাজিক সংগঠনের ভিত্তি ছিল টোটেম।
বর্তমান সমাজ ও সভ্যতা বিকাশে দৃশ্যপট-২-এ শিক্ষকের পড়ানো নব্যপ্রস্তর যুগের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে বলে আমি মনে করি।
দৃশ্যপট-২-এ শিক্ষক যে যুগ সম্পর্কে পড়াচ্ছিলেন সে যুগের মানুষ জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও উপকরণ নিজেরাই উৎপাদন করত। এছাড়া তাদের সামাজিক সংগঠনের ভিত্তি ছিল টোটেম বিশ্বাস, যা নব্যপ্রস্তর যুগের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষ সমাজ ও সভ্যতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, নব্যপ্রস্তর যুগেই কৃষির উদ্ভব ঘটে। আর কৃষির উদ্ভবের সাথে সাথে মানুষ স্থায়ীভাবে আবাস গড়ে তোলে। নব্যপ্রস্তর যুগেই টোটেম বিশ্বাস থেকে সামাজিক সংগঠনগুলো গড়ে ওঠে। এসব সংগঠন গোষ্ঠী জীবনে শৃঙ্খলা ও সংহতি রক্ষা করে। নব্যপ্রস্তর যুগে প্রতিটি গ্রাম বা সংগঠন ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। জীবনধারণের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপকরণ গ্রামের মানুষ নিজেরাই উৎপাদন করত। এ যুগের মানুষ উন্নত মানের হাতিয়ার তৈরিতে পারদর্শী ছিল। হাতিয়ার তৈরিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্যই এ যুগকে বলা হয় নব্যপ্রস্তর যুগ। নব্যপ্রস্তর যুগের গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার হলো মৃৎপাত্র। এ যুগের আরেকটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলো চাকা। চাকা আবিষ্কারের ফলে সভ্যতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। উন্নয়ন শিল্পের বিকাশেও নব্যপ্রস্তর যুগের প্রভাব অপরিসীম। এ যুগেই সুতা তৈরির যন্ত্র, চরকা, তাঁত ইত্যাদি আবিষ্কৃত হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, নব্যপ্রস্তর যুগেই স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতির বিকাশ ঘটে। এছাড়া বিনিময় প্রথা, সম্পত্তিতে ব্যক্তি মালিকানা সৃষ্টি বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের উদ্ভব এ যুগেই হয়। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, নব্যপ্রস্তর যুগেই ভাষার উদ্ভব ঘটে। তদুপরি শিল্পকলার ক্ষেত্রেও নব্যপ্রস্তর যুগের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, বর্তমান সমাজ ও সভ্যতা বিকাশে নব্যপ্রস্তর যুগের অবদান ব্যাপক।