অর্পিতাদের গ্রামে ফাল্গুনী পূর্ণিমায় এক বিরাট উৎসবের আয়োজন করা হয়। অর্পিতা তার মায়ের সাথে সেখানে যায়। সে সকল ধরনের উৎসব উপভোগ করে বুঝতে পারে যে, ধনী-গরিব, নারী- পুরুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। সকলেই সবধরনের উৎসব উপভোগ করতে পারে। অপরদিকে কানন তার দিদির সাথে আষাঢ় মাসের শুল্কা দ্বিতীয়া তিথিতে শহরে তার মামার বাসায় বেড়াতে আসে। তার মামার বাসার কাছাকাছি এক বিরাট মন্দির দেখতে পেল। সেখানে সে অনেক লোকের সমাগম দেখতে পায়। ভক্তগণ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে- এ দেখে কাননের মনে এক ধর্মীয় ভাব জাগ্রত হয়। এ যেন এক মিলন মেলা।
কানন যে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করছে তা হলো রথযাত্রা। এ অনুষ্ঠানটির তাৎপর্য অপরিসীম।
রথযাত্রা হচ্ছে আষাঢ় মাসে আয়োজিত একটি অন্যতম প্রধান হিন্দু উৎসব। ভারতের ওড়িষা ও পশ্চিমবঙ্গে এ উৎসব বিশেষ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়। রথযাত্রার প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ভক্ত ও ভগবানের মধ্যে মিলনের ব্যকুলতা। জাতিগত বিদ্বেষ, হানাহানি, ধর্মীয় উন্মাদনায় যখন আমাদের আবাসভূমি পৃথিবী নামক গ্রহটি বিপর্যয়ের সম্মুখীন, বিশ্ব নেতৃত্ব দিকভ্রান্ত, মানবতা রক্তাক্ত, তখনই শ্রীজগন্নাথ দেবের কৃপাপুষ্ট রথযাত্রা উৎসব বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দ, সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে সমস্ত মানুষ এ উৎসবে অংশগ্রহণ করে মৈত্রীময় ও প্রীতিময় পারস্পরিক সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে। তাছাড়া রথযাত্রা উৎসবের মাধ্যমে সর্বব্যাপী শান্তি, সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের সৃষ্টি হচ্ছে। রথযাত্রার একটি শিক্ষা হচ্ছে সাম্য। এ সাম্যবোধ থেকে সমাজে সকলের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকার ক্ষেত্রে রথযাত্রা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এজন্য একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনে রথযাত্রার তাৎপর্য অপরিসীম।