চিত্রে প্রতিফলিত ধর্মাচারগুলো হলো যথাক্রমে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া ও রাখীবন্ধন, যেগুলো আমার এলাকায় মহা সাড়ম্বরে উদ্যাপন করা হয়। ধর্মাচার ধর্মীয় বিধি-বিধান দ্বারা অনুমোদিত। ধর্মানুষ্ঠানে ধর্মাচার পালন করা হয়। চিত্র-১ এর 'ভ্রাতৃদ্বিতীয়া' এবং চিত্র-২ এর 'রাখীবন্ধন' এমনই দুটি ধর্মাচার। 'রাখী' কথাটি রক্ষা শব্দ থেকে উৎপন্ন। হিন্দু ধর্মাচারের মধ্যে রাখীবন্ধন অন্যতম। এদিন বোনেরা তাদের ভাইদের হাতে রাখী নামে একটি পবিত্র সুতো বেঁধে দেয়। ভাই-বোনের মধ্যকার আজীবন ভালোবাসার প্রতীক বহন করে রাখীবন্ধন। নিজের ভাই ছাড়াও আত্মীয় ও অনাত্মীয় ভাইদের' হাতেও রাখী পরানো হয় এবং এতে ভাই-বোনের মধ্যে মধুর সম্পর্ক স্থাপিত হয়। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এ পর্বটি পালন করা হয় বিধায় এ দিনটি রাখী পূর্ণিমা নামে পরিচিত। আর কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উৎসব পালন করা হয়। এ দিনটি বড়ই পবিত্র। পুরাণে উল্লেখ আছে- কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে যমুনাদেবী তাঁর ভাই যমের মঙ্গল কামনায় পূজা করেন। তাঁরই পুণ্যপ্রভাবে যমদেব অমরত্ব লাভ করেন। এ কল্যাণব্রত স্মরণে রেখে বর্তমান কালের বোনেরাও এ দিনটি পালন করে আসছে। ভাইকে যাতে কোনো বিপদ-আপদ স্পর্শ করতে না পারে সেজন্য বোনদের সতত কামনা! এদিন উপবাস থেকে ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়া হয়। বাঁ হাতের কড়ে অথবা অনামিকা আঙুল দিয়ে চন্দনের (ঘি, কাজল বা দধিও হতে পারে) ফোঁটা দিয়ে ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে বলা হয়-
'ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।'
এজন্য এ অনুষ্ঠানের এক নাম 'ভাইফোঁটা'।
ভাইকে ফল, মিষ্টি, পায়েস, লুচি প্রভৃতি উপাদেয় খাদ্য পরিবেশন করা হয়। শুধু পারিবারিক গণ্ডির মধ্যেই নয়, এ উৎসবের মধ্য দিয়ে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব। আমার এলাকায় চিত্রে প্রতিফলিত ধর্মাচারগুলো এভাবেই উদ্যাপন করা হয়।