রওনক তার মামার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সেই এলাকায় অনেক সরিষা ক্ষেত দেখল। একদিন বিকেলে সরিষা ক্ষেতে গিয়ে ক্ষেতের পাশে অনেকগুলো চারকোণা বাক্স দেখতে পেল। সে আরও দেখল বাক্সের ভেতর কিছু পোকা রয়েছে। সে চাষিকে জিজ্ঞাসা করলে চাষি বললো, 'এটি সামাজিক পতঙ্গ যা সরিষার পরাগরেণু খেয়ে থাকে।' চাষি আরও বললো, 'এ পতঙ্গের অনেক অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।'
রওনকের দেখা পতঙ্গটি অর্থাৎ মৌমাছি মধু উৎপাদনে সাহায্য করে।
রোগব্যাধি নিরাময়ে মধুর ব্যবহার অতি সুপ্রাচীন। মধুতে যে গ্লুকোজ থাকে তা সেবনের পরই সরাসরি রক্ত দ্বারা শোষিত হয়ে দেহে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়। এছাড়া মধুতে বিদ্যমান রিবোফ্লাভিন, নিকোটিনিক অ্যাসিড প্রভৃতি ভিটামিন দেহের সুস্থতা ও সজীবতা রক্ষা করে এবং রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মধুতে যে প্রোটিন থাকে তা দৈহিক বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণের জন্য অত্যাবশ্যক। এতে বিদ্যমান খনিজ পদার্থ দেহের অভ্যন্তরীণ শারীরবৃত্তিক ক্রিয়াকলাপও নিয়ন্ত্রণ করে। মধুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শরীরের হাড় গঠনের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। এতে উপস্থিত তামা ও লৌহজাতীয় খনিজ পদার্থ রক্তের লোহিত কণিকা তৈরি করে। মধুতে উপস্থিত ভিটামিন 'বি' স্নায়ুমণ্ডলীকে সতেজ রাখে। এটি বেরিবেরি, পেলেগ্রা জাতীয় মারাত্মক রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম দেহের এনজাইম অনুঘটকের একটি আবশ্যকীয় উপাদান।
শ্বাসকষ্ট, ঠাণ্ডা, সর্দি কাশি প্রতিরোধ, জ্বর, ক্ষত, চক্ষু রোগ, জিহ্বার ঘা, গলার ঘা, আগুনে পোড়া ঘা দূর করে। মৌমাছির চাকের মধ্যভাগে অথবা পাশের দিকে মধু, মোম ও পরাগরেণু মিশিয়ে মৌ-রুটি তৈরি করা হয় যা ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার জন্য উপকারী। গ্যাস্ট্রিক আলসারে আক্রান্ত রোগীর জন্য নিয়মিত মধু সেবন সুফলদায়ক। বুক ও পেটের ব্যথা ও সর্বোপরি হৃৎপিণ্ডের যেকোনো রোগ নিরাময়ে মধু উপকারী।
অতএব উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, রওনকের দেখা পতঙ্গ মানুষের রোগ নিরাময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।