পরিমল বাবু চাচার বাড়িতে গিয়ে দেখেন উন্নত জাতের একটি গাভি দৈনিক ১৫ থেকে ২০ লিটার দুধ দেয়। এই গাভির মা দেশি, আকারে খুব ছোট। মা এত ছোট অথচ বাচ্চা এত বড়, দুধও দেয় বেশি এতে পরিমল বাবু খুব আশ্চর্য হয়। এর কারণ জানতে চাইলে তার চাচা দেশি গাভিকে কৃত্রিম প্রজনন করানোর কথা বলেন। এরপর পরিমল বাবু দেশি গাভিকে কৃত্রিম প্রজনন করিয়ে প্রাপ্ত গাভি থেকে দৈনিক ১৮-২০ লিটার দুধ পান।
উদ্দীপকের কার্যক্রমটি হলো কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গাভিকে প্রজনন করিয়ে উন্নত জাতের গরু তৈরি করা।
যে পদ্ধতিতে গর্ভধারণের উদ্দেশ্যে যন্ত্রপাতির সাহায্যে সংগৃহীত ও প্রক্রিয়াজাতকৃত ষাঁড়ের বীর্য বা সিমেন কৃত্রিমভাবে গাভি/ বকনার জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়, তাকে কৃত্রিম প্রজনন বলে। কৃত্রিম প্রজননে একবার ষাঁড় হতে সংগ্রহকৃত সিমেনের মাধ্যমে ৩০০-৪০০টি গাভিকে প্রজনন করানো সম্ভব।
বাংলাদেশের খামারিগণ সাধারণত সনাতন পদ্ধতিতে ষাঁড়ের মাধ্যমে পাল দিয়ে থাকেন। এ সময় খামারিকে অনেক সতর্ক থাকতে হয়। এমনকি গাভি গরম হওয়ার লক্ষণ দেখা গেলে তখন সময়মতো ভালো জাতের ষাঁড় সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। ফলে খামারিগণ যে ধরনের ষাঁড় ব্যবহার করে প্রজনন করান তাতে ভালো জাতের গরু পাওয়া যায় না। সনাতন প্রক্রিয়ায় প্রজনন করানো হলে খামারিগণ নিশ্চিত হতে পারেন না যে সিমেন গাভির জরায়ুতে সঠিক জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে কিনা। এতে অনেক সময় গর্ভধারণ হয় না। বিভিন্ন যৌন ব্যাধি গাভিকে আক্রান্ত করতে পারে সরাসরি প্রজননের ফলে। অনেক সময় গাভি ও ষাঁড়ের দেহের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। ফলে স্বাভাবিক প্রজনন করানো সম্ভব হয় না। স্বাভাবিক প্রজননের জন্য খামারিকে অতিরিক্ত একটি ষাঁড় পালন করতে হয় যা খামারের ব্যয় বৃদ্ধি করে। পশু মালিক যদি কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পশুকে প্রজনন করান, তাহলে উপরিউক্ত সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হন না। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে গাভির গর্ভধারণের হার বেশি হয়।
তাই বলা যায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কৃত্রিম প্রজনন উন্নত জাতের রোগ প্রতিরোধক্ষম ও মাংস ও দুধ উৎপাদনশীল গাভি উৎপাদনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অতএব, পরিমল বাবুর কার্যক্রমটি যথার্থ।