নাজিম মুন্সি এ বছর পাট ক্ষেত থেকে ব্যাপক ফলন পেল। কিন্তু এ বছর তার এলাকায় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায়- নদী নালা, খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। ফলে সে পাট কাটার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল। এলাকার কৃষি কর্মকর্তা তাকে অল্প পানি ব্যবহার করে সমস্যা সমাধানের উপায় বলে দিল।
উদ্দীপকে নাজিম মুন্সিকে দেওয়া কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শকৃত পদ্ধতিটি ছিল পাটের রিবন রেটিং। রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পচনের কৌশলগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো
i. পাট গাছের বয়স ১০৫-১১০ দিন হলে পাট কাটা উচিত। কারণ এ সময় পাট কাটলে আঁশের মান ভালো হয়, গোড়ায় তেমন কাটিং থাকে না।
ii. পাট কাটার পর পাতা ঝরানোর জন্য পাতার অংশগুলো খড়কুটা দিয়ে ৭২ ঘন্টা (৩ দিন) ঢেকে রাখলে পাতা ঝরে যায় অথবা পাট গাছের আগা থেকে ৬-৯ ইঞ্চি (১৫-২২.৫ সেমি) পরিমাণ মাথা কেটে দিলে পাতা ঝরানোর প্রয়োজন হয় না। এরপর পাট গাছের গোড়ার ৩-৪ ইঞ্চি পরিমাণ অংশ বাঁশের মুগুর বা হাতুড়ি দিয়ে থেঁতলাতে হবে।
iii. পাতা ঝরানো ও গোড়া থেঁতলানোর পর ইংরেজি 'U' আকৃতি রিবনারের সাহায্যে ছাল ছাড়াতে হয়। তিনটি পাটকাঠি 'U'- এর মধ্যে রেখে ছাল দু'দিকে টান দিলেই কাঠি থেকে ছাল সহজে পৃথক হয়ে আসে। পরে কয়েকটি গাছের ছাল একত্রে নিয়ে আঁটি বাঁধা হয়।
iv. প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে উৎপাদিত পাটের ছাল পচানোর জন্য ১টি গর্ত (১২ হাত লম্বা, ৪ হাত পাশ এবং ২ হাত গভীর) করতে হবে এবং পলিথিন দিয়ে গর্তের তলা ও কিনারা ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে। এরপর গর্তে প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে গর্তের ভেতরে মুড়ি/আঁটি/বান্ডিল বাঁধা ছালগুলোকে ফেলতে হবে। প্রতি কেজি ছাল পচার জন্য ৩-৪ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, মুড়ি/বান্ডিল বাঁধা ছালগুলো পুকুর, ডোবা, মাটি বা সিমেন্টের চাড়িতে বা মাটির গর্তে পলিথিন ব্যবহার করে জাগ দেওয়া যায়। সাধারণত ১২-১৫ দিনের মধ্যে পচন সম্পন্ন হয়। ছালে পচন ক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য গর্তের পানিতে কিছু পাট পচা পানি দিতে হবে অথবা প্রতি ১০০০ কেজি ছালের জন্য ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার দিতে হবে। গুণগতমানের আঁশ উৎপাদনে এ পদ্ধতি অত্যন্ত উপযোগী।
V. ছাল পানিতে ডুবানোর ৭-৮ দিন পর দু'একটা ছাল তুলে ও ধুয়ে দেখতে হয় আঁশ পৃথক হয়েছে কিনা। সাধারণত ১২-১৫ দিনের মধ্যে পচন সম্পন্ন হয়। ছাল ধুয়ে আঁশ সংগ্রহ করতে হয়।
উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে পাটের রিবন রেটিং পদ্ধতিতে অল্প পানিতে পাটের ছাল পচানোর পদ্ধতি জানা যায়।