কাজী নজরুল ইসলামকে কেন বিদ্রোহী কবি বলা হয় তা ব্যাখ্যা করুন।
কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি বলার কারণগুলি নিম্নরূপ:
বিদ্রোহী কবিতা: তাঁর বিখ্যাত কবিতা "বিদ্রোহী" (১৯২২) বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এই কবিতায় তিনি নিজেকে "বিদ্রোহী রণক্লান্ত" এবং "বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির" রূপে ঘোষণা করেন। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে এবং সমাজের সকল প্রকার অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তাঁর এই বলিষ্ঠ উচ্চারণ তাঁকে বিদ্রোহী কবিরূপে পরিচিত করে তোলে।
সামাজিক অনাচারের প্রতিবাদ: কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতায় সমাজের কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, জাতিভেদ প্রথা এবং নারীর প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং তাদের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরেছেন।
ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা: নজরুল ছিলেন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের ঘোর বিরোধী। তাঁর কবিতা ও গানগুলি পরাধীন জাতির মনে স্বাধীনতার স্পৃহা জাগিয়ে তোলে। তিনি "ভাঙার গান" এবং "কারার ঐ লৌহ কপাট" এর মতো গান রচনা করে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার আহ্বান জানান।
ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধতা: নজরুল হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে লিখেছেন। তিনি "মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান" এর মতো পংক্তির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেন।
নারী-পুরুষের সমতার পক্ষে: কাজী নজরুল ইসলাম নারী-পুরুষের সমান অধিকারের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। "নারী" কবিতায় তিনি নারীর অবদান ও মর্যাদার কথা তুলে ধরেন এবং সমাজে নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোসহীন: নজরুল ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক আপোসহীন যোদ্ধা। তিনি শাসক বা সমাজের কোনো প্রকার রক্তচক্ষুকে ভয় পাননি এবং সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।
মোটকথা, কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মে বিদ্রোহের বহুমাত্রিক প্রকাশ দেখা যায়। তাঁর কবিতা, গান ও প্রবন্ধগুলিতে ঔপনিবেশিক শাসন, সামাজিক অনাচার, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদ উচ্চারিত হয়েছে। এই বিদ্রোহী চেতনা এবং আপোসহীন মনোভাবের কারণেই তিনি "বিদ্রোহী কবি" হিসাবে খ্যাত।