Job

যে কোন একটি বিষয়ে রচনা লিখুন।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাই নতুন যুগের উম্মোচন (প্রবন্ধ রচনা)

dsuc.created: 2 years ago | dsuc.updated: 8 months ago
dsuc.updated: 8 months ago

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: নতুন যুগের উন্মোচন

স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে এ যুগের সূচনা হয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা ও দক্ষতার সঙ্গে এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে বদলে যাবে দেশের অর্থনৈতিক চালচিত্র। পরিচয় মিলবে নয়া অর্থনীতির। কারণ এতে সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রার। একই সঙ্গে আবহাওয়ার পূর্বাভাস, টিভি বা রেডিও চ্যানেল, ফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের উৎকর্ষ সাধন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের স্থান চিহ্নিতকরণ, আর্থিকখাতে কম খরচে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং দুর্নীতি ও অনিয়ম কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে সবকিছুই সম্ভব হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ব্যবহারিক দক্ষতার ওপর। এ জন্য দেশী ও বিদেশী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশে এ মুহূর্তে টিভি চ্যানেল আছে ৪৬টি। দেশে স্যাটেলাইটের ব্যবহার দিনদিন বেড়ে চলেছে। বিটিআরসির হিসাব অনুযায়ী, প্রতিটি টিভি চ্যানেলকে স্যাটেলাইটের ভাড়াবাবদ প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ ডলার দিতে হয়। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণের পর ওই ভাড়ার টাকা দেশেই থেকে যাবে।

এ ছাড়া দেশে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বা আইএসপি আছে কয়েক শ'। রেডিও স্টেশন আছে ১৫টির ওপরে। আরও রেডিও আসছে। ভি-স্যাট সার্ভিস তো আছেই। সবই চলেছে বিদেশীদের ওপর নির্ভর করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কার্যক্রম শুরু হলে শুধু বৈদেশিক মুদ্রাই সাশ্রয় হবে না, এর অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটানের মতো দেশে ভাড়া দেয়া যাবে। যেখান থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ আয় করা সম্ভব। কারণ ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে মাত্র ২০টি ব্যবহার করবে বাংলাদেশ । বাকি ২০টি ভাড়া দেয়া হবে ।

দেশের উন্নয়নে প্রযুক্তির বিকাশের বিকল্প নেই। স্যাটেলাইট হয়তো সেই প্রযুক্তি ব্যবহারের দিগন্ত উন্মোচন করবে। অনেক সময় স্যাটেলাইটের ভাড়ার নামে অনেক অর্থ দেশ থেকে পাচার করা হয়। নিজস্ব উপগ্রহ চালু হলে ভাড়াবাবদ অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব। তিনি বলেন, ‘তবে স্যাটেলাইটটি কীভাবে ব্যবসায়িক উদ্দেশে ব্যবহার করতে হয় সেটা জানা জরুরী। তা না হলে যে পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে সেটাই বা আসবে কোথা থেকে? হুজুগে পড়ে একটা কাজ করলেই হবে না, এর ব্যবহারেও দক্ষতা বাড়াতে হবে ।’

এ মুহূর্তে বিশ্বের ৫৬টি দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে। প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড এমনকী শ্রীলঙ্কার মতো দেশেরও নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে। বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য ৮৫ কোটি টাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষজ্ঞ কোম্পানিকে প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় । সেই প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০১৩ সালে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনা হয়। মহাকাশে এই কক্ষপথের অবস্থান ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অর্থাৎ ফিলিপিন্সের ওপর। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সম্পাদিত চুক্তির ভিত্তিতে প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় ১৫ বছরের জন্য এ কক্ষপথ ভাড়া নেয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বিগত তিন বছর যাবত আয়ের ধারায় রয়েছে। ইতোমধ্যেই কোম্পানির মোট আয় ৩০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। বর্তমানে কোম্পানির মাসিক আয় প্রায় ১০ কোটি টাকা, যার প্রায় পুরোটাই দেশীয় বাজার থেকে অর্জিত হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে এই আয় আরও বৃদ্ধি পাবে। দেশের দুটি স্বনামধন্য ব্যাংক ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে তাদের এটিএম সেবা দেওয়া শুরু করেছে। আরও অনেকগুলো সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সাথে আলোচনা চলমান আছে, যারা অদূর ভবিষ্যতে চুক্তি স্বাক্ষর সাপেক্ষে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবার আওতায় আসবে। সম্প্রতি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী এবং ডিজিএফআই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবার আওতায় আসবে। * (আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন) বিএসসিএল এর সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় বাংলাদেশে বাহিনীগুলো সম্মিলিতভাবে তিনটি ট্রান্সপন্ডারের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করবে। বাংলাদেশ সরকারের 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' প্রতিশ্রুতি পূরণের অংশ হিসেবে বিএসসিএল ৩১টি দুর্গম ও প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চলের ১১২টি স্থানে টেলিযোগাযোগ সেবা দিচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে আরও বেশি সংখ্যক দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকার সুবিধাবঞ্চিত জনগণকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবার আওতায় আনার কার্যক্রম চলমান আছে।

এছাড়াও জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সেবা নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং অনেকের সাথেই আলোচনা সক্রিয় আছে। পর্যায়ক্রমে এই ব্যবসায়িক আলোচনাগুলো সফল হলে দেশীয় বাজারেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর বৃহৎ গ্রাহক গোষ্ঠী তৈরি হবে এবং এর থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ও সম্ভব হবে। চাহিদার তুলনায় বৈশ্বিক বাজারে স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথের সরবরাহ বেশি থাকায় এবং কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিদেশের বাজারে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর বিপণন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। বর্তমানে মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটায় কোম্পানি আন্তর্জাতিক বাজারে বিপণন কার্যক্রম নব উদ্যমে শুরু করেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কোম্পানি দেশীয় বাজার উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছে এবং স্যাটেলাইট নির্ভর নিত্য নতুন সেবার প্রসারে কাজ করছে।

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার শুরুর মাধ্যমে বিএসসিএল বিদেশের বাজারেও ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতে এটি আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়। অত্যন্ত জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি বিদেশি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে বাংলাদেশসহ এতদঞ্চলে সম্প্রচারের আগ্রহ দেখিয়েছে এবং তাদের সাথে আলোচনা চলমান আছে।

1 year ago

বাংলা

Please, contribute to add content.
Content
Promotion