Bangla Essay Writing: গ্রামীণ অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা।
গ্রামীণ অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা
Microcredit বা ক্ষুদ্রঋণ বলতে প্রাথমিক পর্যায়ে যতটুকু পরিমাণ টাকা গরীব জনগণ কোনো উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ড বা দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করে আয় বৃদ্ধি বা পারিবারিক ব্যয় করতে পারে তাকেই বুঝায়। অন্যভাবে, অল্প পরিমাণ পুঁজি আয় বৃদ্ধিকারক কাজে জামানতবিহীনভাবে প্রদান করাকে ক্ষুদ্রঋণ সুঝায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ ক্ষুদ্রঋণের সংজ্ঞায় বলেন, Microcredit may be defined as a program that provides credit for self- employment and other financial services and business services to the poor people.
ক্ষুদ্রঋণের বৈশিষ্ট্যগুলি হলোঃ গরিবদের জন্য ঋণ, জামানতমুক্ত ঋণ, সাংগঠনিক প্রেসার বা চাপ সৃষ্টির ঋণ, পল্প আকারের ঋণ, আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য ব্যবহৃত ঋণ।
বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির উদ্দেশ্য ও সফলতার মিশ্র ফলাফল রয়েছে। মূলত এই কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র্যা বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়ন। সেই হিসেবে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি দারিদ্র্য বিমোচনের একমাত্র হাতিয়ার হতে পারে না, কারণ এটা দিয়েই শুধু দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। তবে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি আর্থ সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম।
ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে উদ্যোক্তা তৈরী হচ্ছে। নারী ও পুরুষ ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। নারীরা গৃহস্থলির কাজ কর্ম ছাড়াও এখন মাঝারি ধরনের ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ছে। হাঁস-মুরগী পালনসহ বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প উৎপাদনে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। আর্থিকভাবে হয়ে উঠছে তারা স্বাবলম্বী। এর ফলে পরিবারে সিন্ধান্ত গ্রহণের সময় পূর্বের তুলনায় এমন নারীর মতামতকে প্রধান্য দেয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে পুরুষরা এখন পুকুরে মাছ চাষসহ বনায়ন, স্থানীয় ব্যবসায় জাড়িয়ে পড়ছে যা তাদের আর্থিক স্বাবলম্বীর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আর ফেরত দিচ্ছে না একটি গোষ্ঠী যা অর্থনীতির ভাষায় খেলাপী বলা হয়। এই খেলাপী ঋণের পরিমাণ এখন এক লাখ কোটিরও বেশি। এটি যেকোন অর্থনীতির জন্য একটি ভয়াবহ অশনিসংকেত। কিন্তু গ্রামীণ দরিদ্র মানুষ বিভিন্ন ধরনের NGO হতে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তারা তাদের ব্যবসা হতে অর্জিত মুনাফার মাধ্যমে তা পরিশোধ করছে যা ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য একটি অনন্য উদাহরণ। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে।
ক্ষুদ্র ঋণের কিছু নেতিবাচক ভূমিকাঃ ক্ষুদ্রঋণের কিছু নেতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। প্রথমদিকে প্রচলিত ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতারা পারিবারিক, সামাজিক, মানসিক সমস্যার সম্মুখিন হত। ঋণগ্রহীতাদের সামাজিক সমস্যাগুলি তাদের সাংস্কৃতিক গঠন ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে উদ্ভূত। ঋণ কার্যক্রমে যুক্ত হবার পর ঋণ গ্রহীতার নতুন এক মানসিক দুশ্চিন্তার মুখোমুখি হন। ঋণের টাকা যেই ব্যবহার করুক না কেন নারীকেই ঋণের কিস্তি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ নিয়ে তাদেরকে বেশি দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। কিস্তি সময়মত পরিশোধ করতে না পারলে ঋণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অথবা সে ঋণ পরিশোধ নাও হতে পারে। গরু, ছাগল ইত্যাদি যে কোন কিছুর বিনিময়ে ঋণের টাকা ফেরৎ পেতে কর্মীদেরও তৎপরতা মানবতা ছাড়িয়ে যায়। ঋণ গ্রহণের এক সপ্তাহ পর থেকেই কিস্তি পরিশোধ করতে হয় বলে তাদেরকে অন্যান্য আয়ের উপর নির্ভর করতে হয়।
আলোচনার পরিশেষে বলা চলে যে, ক্ষুদ্রঋণ কার্যসূচির বিষয়ে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো সুদের হার। সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে ও কিস্তির সময়কাল বাড়িয়ে দিলে এই ঋণদান কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন সম্ভব।