রবার্ট কার্লাইল ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্রিটিশদের অবদান নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে জানতে পারলেন, ইংরেজ শাসকরা শাসনতান্ত্রিক প্রয়োজনে নানা ধরনের গ্রন্থ, গেজেট ইত্যাদি প্রকাশ করেছিলেন। তাদের পাশাপাশি এ অঞ্চলের বুদ্ধিজীবীরাও বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এসব প্রকাশনার ওপর নির্ভর করে ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত নতুন একটি বিষয়ের অধ্যয়ন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে যোগ্য শিক্ষক, কার্যকর সিলেবাস, প্রশাসকদের অনাগ্রহ ইত্যাদি কারণে বিষয়টির অগ্রগতি মন্থর হয়ে যায়।
উদ্দীপকে নির্দেশিত সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের অগ্রগতি মন্থর হওয়াকে সমাজবিজ্ঞানের সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে বলে আমি মনে করি।
সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্বটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সংস্কৃতির দুটি ধরনের (বস্তুগত ও অবস্তুগত) মধ্যে একটি কোনো এক সময়ে অন্যটি থেকে দ্রুত পরিবর্তন হওয়ার ফলে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া অংশটিকে অগ্রসর অংশটির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। সংস্কৃতির এক অংশের পিছিয়ে পড়া এবং সেই অংশের তা কাটিয়ে ওঠার প্রবণতাই হচ্ছে সাংস্কৃতিক ব্যবধান। আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী অগবার্ন তার 'Social Change' গ্রন্থে এ তত্ত্ব প্রদান করতে গিয়ে বলেন, "সংস্কৃতির দুটি দিক আছে। একটি স্বাধীন এবং অন্যটি নির্ভরশীল।" অগবার্নের মতে সংস্কৃতির স্বাধীন দিকটি নির্ভরশীল দিকটিকে পিছনে ফেলে দেয় এবং সেই নির্ভরশীল দিকটিকে তখন সামঞ্জস্য বিধানের জন্য তৎপর হতে হয়। তিনি উদাহরণ দিয়ে দেখান যে, মোটরগাড়ি হচ্ছে স্বাধীন সংস্কৃতি আর রাস্তা হচ্ছে নির্ভরশীল সংস্কৃতি। মোটরগাড়ি বেড়ে যাবার ফলে রাস্তায় যানজট হয় এবং এ অসামঞ্জস্যতা দূরীকরণে রাস্তা প্রশস্তকরণ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ঠিক তেমনি সময়ের পরিক্রমায় সমাজবিজ্ঞানের পরিধি, আলোচনা ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হতে থাকে। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানের জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষক, কার্যকর সিলেবাস প্রণয়ন, প্রশাসকদের অনাগ্রহ ইত্যাদি কারণে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের অগ্রগতি মন্থর হয়ে পড়েছিল। পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সমাজবিজ্ঞান বিষয়টির অগ্রগতি মন্থর হওয়া সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্বের প্রয়োগকে নির্দেশ করে।