শফিকের বড় ভাই প্রাণিবিদ্যার ছাত্র। একদিন শফিক তার ভাইকে প্রশ্ন করল, ভাইয়া! জগতে কত ধরনের প্রাণী আছে এবং এদের মধ্যে কীভাবে পার্থক্য করা হয়? ভাইয়া বলল, জগতের যাবতীয় প্রাণীকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। আবার জগতে এমন কিছু বিষয় আছে, যেগুলোর ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় না। এজন্য সেসব বিষয়ের শ্রেণিবিন্যাসও করা যায় না।
দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেণিকরণকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আমরা জাগতিক বস্তু বা ঘটনাবলিকে সুবিন্যস্ত করে এগুলো সম্পর্কে সুশৃঙ্খল জ্ঞান অর্জন করতে পারি। কারণ আমরা যখন কোনো বিষয়ের শ্রেণিকরণ করি, তখন সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য অনুসারে বিষয়বস্তুগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিতে বিন্যস্ত করি। আর তা করতে গিয়ে আমরা বিষয়বস্তুগুলোর প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত হই। কারণ কোনো বিষয়কে জানতে হলে তার সাথে অন্যান্য বিষয়ের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ করতে হয়। আর এভাবেই আমরা শ্রেণিকরণের মাধ্যমে বস্তুর সাথে বস্তুর, ঘটনার সাথে ঘটনার এবং শ্রেণির সাথে শ্রেণির সম্পর্ক নির্ণয়ের মাধ্যমে প্রকৃতি সম্বন্ধে সুস্পষ্ট জ্ঞান অর্জন করতে পারি। শ্রেণিকরণ আমাদের 'স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে থাকে।
প্রকৃতিতে অসংখ্য বস্তু ও ঘটনা রয়েছে, সেগুলোকে কোনো সুশৃঙ্খল পদ্ধতি ছাড়া স্মৃতিতে ধরে রাখা সব ক্ষেত্রে সম্ভম্ব হয় না। আর এই বস্তু বা ঘটনাগুলোকে যখন শ্রেণিকরণের মাধ্যমে সুবিন্যস্ত করা হয়, তখন এগুলো মনে রাখার বিষয়টি অত্যন্ত সহজ হয়ে পড়ে। শ্রেণিকরণ আরোহ অনুমানের সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। বস্তুত আরোেহ অনুমানে আমরা কোনো শ্রেণির অন্তর্গত কয়েকটি দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে ওই শ্রেণির সব সদস্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সে ক্ষেত্রে আরোহের সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমে আমাদের সংশ্লিষ্ট শ্রেণিটি সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। আর শ্রেণিকরণের মাধ্যমেই আমরা এরূপ জ্ঞান পেয়ে থাকি।
অতএব বলা যায়, শ্রেণিকরণ কেবল আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধিরই সহায়ক নয়; বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও শ্রেণিকরণ আরও কিছু প্রায়োগিক সুবিধা দিয়ে থাকে।