রূপনারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দারা জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সব খাদ্য ও উপকরণ নিজেরাই উৎপাদন করে। প্রয়োজনীয় কোনো কিছু না পাওয়া গেলে তারা পার্শ্ববর্তী আকবরগঞ্জ গ্রামের মানুষদের সাথে পণ্য বিনিময় করে। রূপনারায়ণপুর গ্রামের জমিগুলোতে আগে যৌথ মালিকানা থাকলেও এখন ব্যক্তি মালিকানা বিদ্যমান।
উদ্দীপকের রূপনারায়ণপুর গ্রামের সাথে অর্থাৎ নব্যপ্রস্তর যুগের সমাজ ব্যবস্থার সাথে বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজকাঠামোর তুলনামূলক আলোচনা নিম্নরূপ-
সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে নব্যপ্রস্তর যুগের মানুষেরা কৃষিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা, পশুপালন, তামা ও চাকার উদ্ভাবন, কৃষি যন্ত্রপাতি আবিষ্কার, স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি এবং বিনিময় প্রথা চালু, ভাষা, শিল্পকলা চর্চা, ধর্মীয় জীবন ইত্যাদি ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছিল। সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিবেচনায় রেখে এ যুগকে 'নবোপলীয় বিপ্লব' বলে আখ্যায়িত করা হয়। নব্যপ্রস্তর যুগেই স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতির বিকাশ ঘটে। এ যুগের এক একটি গ্রাম ছিল এক একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পৃথক ইউনিটের মতো। নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য গ্রামবাসীদের অন্য গ্রামের ওপর নির্ভর করতে হতো না। নিজেদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিজেরাই উৎপাদন করতে পারত। শ্রমবিভাজন প্রথা এ যুগেই বিকশিত হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজকাঠামোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, গ্রামগুলো কৃষিনির্ভর ক্ষুদ্র জনপদ। এগুলো ক্ষুদ্র এলাকা নিয়ে গঠিত। গ্রামের প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। যদিও বর্তমানে কৃষির পাশাপাশি গ্রামীণ সমাজে ব্যবসায়ী, মৎস্যজীবী, কুমার, তাঁতিসহ বিভিন্ন পেশার লোক বাস করে। গ্রামীণ সমাজকাঠামোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এখানকার পরিবারগুলো যৌথ পরিবার। কৃষিকাজের প্রয়োজনীয়তা থেকেই এ ধরনের পরিবার গ্রামে বেশি দেখা যায়। অবশ্য আধুনিক নগর জীবনের প্রভাবে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার গঠিত হচ্ছে। গ্রামের মানুষের প্রধান সম্পদ হচ্ছে ভূমি। ভূমিকে কেন্দ্র করেই ক্ষমতা কাঠামো ও সামাজিক স্তরবিন্যাস সৃষ্টি হয়। গ্রামীণ সমাজকাঠামোতে সীমিত মাত্রার শ্রমবিভাজনও পরিলক্ষিত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে নির্দেশিত নব্যপ্রস্তর যুগের সাথে বর্তমান বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজকাঠামোর মিল-অমিল দুটোই কমবেশি লক্ষ করা যায়।