বাংলাদেশি যুবক লতিফ ও ভারতীয় যুবক দিলীপ সুইডেনের স্টক হোমের একই বাড়িতে বসবাস করে। একবার লতিফ দিলীপের কাছ থেকে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, ডাক্তার সর্বোপরি কৃষক, শ্রমিক কীভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন যুগিয়েছিল তার তথ্যবহুল বর্ণনা জানতে পারে। শুধু তাই নয়, এই যুদ্ধে ভারতের পত্র-পত্রিকার ভূমিকারও ব্যাপক অবদানের কথা দিলীপ লতিফকে জানায়
দিলীপের জানানো শেষের অবদান হলো ভারতীয় প্রচার মাধ্যমের অবদান, যা বাঙালি জাতি কোনোদিন ভুলবে না।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সহায়ক ভূমিকা হিসেবে কাজ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমতকে সংগঠিত করা এবং বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল দৃঢ় রাখার জন্য ভারতের গণমাধ্যম তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ভারতীয় মিডিয়ায় শক্তিশালী ও যৌক্তিক প্রচারণার ফলে বিশ্বের মানুষ বুঝতে পারে যে, পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটেছে তা পাকিস্তানের নিতান্তই কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। মূলত ভারত পার্শবর্তী দেশ হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই ভারতীয় পত্র-পত্রিকাগুলো অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থা থেকে সংবাদ প্রচার করে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের অধিকাংশ পত্র-পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্ব ভারতীয় গণমাধ্যমের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ সময় ভারতীয় প্রচার মাধ্যমেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চিত্র তুলে ধরে মুখ্য - ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও ভারতীয় প্রচার মাধ্যম স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা এবং নিরীহ বাঙালির বিরুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর অন্যায় আক্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক প্রচারণা চালিয়েছিল। শুধু তাই নয়, মুসলিম বিশ্ব এবং পশ্চিমা শক্তিবর্গকে পাকিস্তানের পর্যায়ক্রমিক অপপ্রচারের বিরুদ্ধাচরণ করা এবং বাংলাদেশের বাস্তবতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে এবং বিশ্ব জনমত গঠনের ক্ষেত্রে ভারতের সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
পাশাপাশি বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরকে শরণার্থীদের দুর্দশা, মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের নিদর্শনসমূহ দেখানোর ব্যবস্থাও করেছিল।