নিউইয়র্কে পাশাপাশি ফ্ল্যাটে বাংলাদেশের শবনম এবং ভারতের চন্দনা পরিবারসহ বাস করে। শবনম একবার চন্দনার কাছ থেকে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, ডাক্তার সর্বোপরি জনসাধারণ কীভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন যুগিয়েছিল তার তথ্যবহুল বর্ণনা জানতে পারে। শুধু তাই নয়, এই যুদ্ধে ভারতের পত্র পত্রিকার ভূমিকাও ব্যাপক অবদানের কথা চন্দনা শবনমকে জানায়।
চন্দনার দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় জনগণের অবদান ফুটে উঠেছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকারের পাশাপাশি ভারতীয় জনগণ তথা শিল্পী-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীগণ বেসরকারি পর্যায়েও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে সভাপতি করে ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারত সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতি গঠিত হয়। ভারতের বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত রবিশংকর আমেরিকার লস এঞ্জেলস-এ বাংলাদেশ কনসার্টের আয়োজন করে দশ লাখ ডলার ইউনিসেফকে দিয়েছিলেন শরণার্থী শিবিরের শিশুদের জন্য। মকবুল ফিদা হুসেনের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ছবি এঁকে বোম্বের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য। বিকাশ ভট্টাচার্য, প্রকাশ কর্মকার, শ্যামল দত্ত রায় ও গণেশ পাইনের মতো খ্যাতিমান শিল্পীরা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে মাসের পর মাস বাংলাদেশের ওপর ছবি এঁকে বিক্রি করেছেন এবং ছবি বিক্রির টাকা শরণার্থী শিবিরে পৌছে দিয়েছেন। অন্নদাশংকর রায়, মৈত্রেয়ী দেবী, শান্তিময় রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, প্রণব রঞ্জন রায়, তরুণ সান্যাল, অধ্যাপক দিলীপ চক্রবর্তী, নির্মল চক্রবাতী, রমেন মিত্র প্রমুখ কবি-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীগণ বাড়ি বাড়ি ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করেছেন।
এককথায় ভারতের শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে তখন বাংলাদেশকে সাহায্য করেছেন।