পৃথিবীতে কোনো কিছুই অর্জন করা সহজ নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কিউবা, যুগোস্লাভিয়া, পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া ও পূর্ব জার্মানি নৈতিক সমর্থন প্রদান করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গণচীন এর বিরোধিতা করে। ফলে বাংলাদেশের বিজয় দেরিতে আসে
বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে বহির্বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।
বিশ্বের পরাশক্তিগুলো তাদের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছিল। কোনো কোনো পরাশক্তি বাংলাদেশের পক্ষে আবার কোনো কোনো পরাশক্তি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেছিল। এসব পরাশক্তির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং মুসলিম দেশগুলো পাকিস্তানের পক্ষে অন্যদিকে ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ইউরোপের দেশগুলো বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান করে। তবে ১৯৭১ সালের ২৫
মার্চের কালরাত এবং পরবর্তী সময়ের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গ বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় অবদান ভারতের। সে সময় ইরাক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন জানায়। মার্কিন প্রশাসনের বিরোধিতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ, প্রচার মাধ্যম, কংগ্রেসের অনেক সদস্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সোচ্চার ছিল। ব্রিটেন ছিল মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে জনমত গঠনের মূলকেন্দ্র। এর পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান ও কানাডার প্রচার মাধ্যমগুলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত গঠনে সাহায্য করে। তাছাড়া ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ইতালি, স্পেন, ডেনমার্ক, সুইডেন প্রভৃতি রাষ্ট্র বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন ব্যক্ত করে। এমনকি কিউবা, যুগোস্লাভিয়া, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া প্রভৃতি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন জানায়।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে বহির্বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।