দাদু নাতিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালি জনগণের মুক্তি সংগ্রামের যথার্থতা বর্ণনা করেন। একই সাথে তিনি হানাদার বাহিনী দ্বারা অত্যাচারিত ও আশ্রয়হীন দেশত্যাগী জনগণকে ভারত সরকার কর্তৃক আশ্রয় প্রদান, খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসা দিয়ে মানবতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত স্থাপনের কথা উল্লেখ করেন
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে ভারত মানবতার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। উদ্দীপকে দাদুর এ মন্তব্যটি যথার্থ।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার, উৎপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বপ্রথম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ভারত। ভারত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্লজ্জ বাঙালি নিধনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করে এবং শান্তিপূর্ণভাবে পাকিস্তান সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানায়। এতদসত্ত্বেও পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের অত্যাচার, উৎপীড়ন ও নির্যাতনের ফলে লক্ষ লক্ষ বাঙালি দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। এ সময় ভারতের সাধারণ জনগণ দেশত্যাগী বাঙালিদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে। ফলে ভারতের সীমান্ত এলাকায় স্থাপিত হয় হাজার হাজার শরণার্থী শিবির। বাঙালি শরণার্থীদের চাপে ভারত সরকার দিশেহারা হয়ে জাতিসংঘের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনমূলক কর্মকান্ড বন্ধের দাবি উত্থাপন করে। কিন্তু পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও. গণচীনের বন্ধুরাষ্ট্র হওয়ায় এবং জাতিসংঘের নেতিবাচক ভূমিকায় ভারত মর্মাহত হয়। ফলে বাংলাদেশে পাক হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, নারী ধর্ষণ, লুটতরাজ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের বীভৎস ঘটনা ভারত প্রচার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর নিকট তুলে ধরে। শুধু তাই নয়, ভারতের তাৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রায় এক কোটি বাঙালি শরণার্থীকে খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। তাছাড়া ভারত সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করলে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের কাজ সহজ হয়।
তাই বলা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য।