সীমা তার বড় বোন দর্শনে স্নাতক পড়ুয়া ঝর্ণার কাছে দর্শনশাস্ত্র সম্পর্কে জানতে চাইল। ঝর্ণা তাকে বলল, দর্শন আমাদের জীবনের অর্থ, স্বরূপ, পরিণতি ও মূল্য নির্ধারণ করে। দর্শন চর্চা ও অনুশীলন জীবনকে করে সুশৃঙ্খল, ব্যক্তিকে করে সত্যানুসন্ধানী এবং সমাজ ও রাষ্ট্রকে করে সুসংহত। ঝর্ণার কাছে দর্শনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানার পর সীমা দুর্শন পাঠে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কিন্তু সে দর্শন পাঠ করতে গিয়ে দেখল, এটি খুবই কঠিন এবং দুর্বোধ্য। তখন ঝর্ণা সীমাকে বলল, দর্শন বুঝতে হলে অবশ্যই যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান থাকতে হবে। কেননা, যুক্তিবিদ্যা হলো দর্শনের ভিত্তি।
যুক্তিবিদ্যা হলো দর্শনের ভিত্তি'- ঝর্ণার এ কথার সাথে আমি একমত। কেননা দর্শনের পরিসর অত্যন্ত ব্যাপক। জীবনের এমন কোনো দিক নেই যা দর্শন আলোচনা করে না। দর্শন হলো ভাষার যৌক্তিক বিশ্লেষণ এবং জীবন ও জগতের সামগ্রিক মূল্যায়ন। এজন্য বলা হয়, সমগ্র বিশ্বজগতে এমন কোনো বিষয় নেই, মানব অভিজ্ঞতার এমন কোনো দিক নেই যা দর্শনের আলোচনার অন্তর্ভুক্ত নয়। দর্শন হলো একটি সামগ্রিক বিষয় এবং যুক্তিবিদ্যা হলো দর্শনের একটি অপরিহার্য শাখা। কেননা যুক্তির আলোকেই দর্শন তার আলোচ্য বিষয়বস্তুকে বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের যেকোনো বিষয় দর্শনের মর্যাদা পেতে হলে তা যৌক্তিক ভিত্তিসম্পন্ন হতে হয়। যুক্তিবিদ্যা যেমন একদিকে দর্শনের শাখা, তেমনি আবার দর্শনের অপরিহার্য ভিত্তি। যুক্তিবিদ্যা যুক্তিপদ্ধতির যে নিয়মাবলি নির্দেশ করে দর্শনকে তা মেনে চলতে হয় এবং সত্তার স্বরূপ ও অস্তিত্ব সম্পর্কে, দর্শন যে যুক্তি প্রদর্শন করে সেগুলোকে অবশ্যই যৌক্তিক নিয়মাবলির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হয়। এদিক থেকে দর্শন যুক্তিবিদ্যার উপর নির্ভরশীল। যুক্তিবিদ্যার নিয়মাবলি ছাড়া দার্শনিক বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। যুক্তিবিদ্যার যৌক্তিক পথ প্রদর্শন দর্শনের জন্য অতি মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা। এজন্য যুক্তিবিদ্যাকে 'দর্শনের ভিত্তি' বলা হয়।