টিপু ও সুলতান যুক্তিবিদ্যা নিয়ে বিতর্ক করছে। টিপু বলল, যুক্তিবিদ্যার পাঠ ছাড়া মানুষ যুক্তিকৌশল রপ্ত করতে ও ও দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। যুক্তিবিদ্যা চিন্তাহীন ও যুক্তিশূন্য মানুষের মধ্যে চিন্তা ও যুক্তিকে সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, সুলতানের যুক্তি হলো যুক্তিবিদ্যা না হলে মানুষ যুক্তিহীন হয়ে যেত একথা সঠিক নয়। কেননা মানুষ স্বভাবগতভাবেই যুক্তিবাদী। তবে বাস্তব জীবনে যুক্তিবিদ্যা পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
বাস্তব জীবন হলো ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক জীবন। শান্তিময় জীবনের প্রত্যাশায় অশান্তি পরিহার করে দক্ষতা, ক্ষমতা, নিপুণতা ও যুক্তি দিয়ে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক জীবনে স্থিতিশীলতা আনয়ন করাই হলো যুক্তিবিদ্যার প্রধান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। অনেকেই বাস্তব জীবনে যুক্তিবিদ্যার প্রয়োগ নিয়ে সমালোচনা করেন। কিন্তু যুক্তিবিদ্যা দাবি করে না যে যুক্তিবিদ্যা না হলে মানুষ যুক্তিহীন হয়ে যেত। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল জন্মগ্রহণ করার পূর্বে মানুষ একেবারে অযৌক্তিক ছিল একথা ঠিক নয়। আদিকালের মানুষ যেভাবে যুক্তিতর্ক করতে পারত, ভুলকে নির্ধারণ করতে পারত, বর্তমানকালের মানুষও সে কাজ অধিকতর নির্ভুলভাবে করতে পারে। তবে মানুষের মধ্যে জীববৃত্তির পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তি আছে। স্বভাবগতভাবেই সে চিন্তা করতে পারে এবং একটি বস্তুর সাথে অপর বস্তুর সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য নির্ধারণ করতে পারে। সমাজ জীবনে 'শিক্ষিত' ও 'অশিক্ষিত' সমস্ত মানুষই কমবেশি এ গুণের ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু অশিক্ষিত মানুষ যতখানী যুক্তিতে পারদর্শী শিক্ষিত মানুষ তার চেয়ে অধিক পারদর্শিতা দেখাতে পারে। চিন্তা ও যুক্তির ক্ষেত্রে এরিস্টটলের গবেষণা ও অবদান ছিল অনন্যসাধারণ। পূর্বে মানুষ তর্কবিতর্ক করত, কিন্তু তর্কে কী পরিমাণ ভুল হতো তা জানত না। কীভাবে ভুল যুক্তি পরিহার করা যায়, যুক্তির পদ্ধতি কত প্রকার ইত্যাদি এরিস্টটল সুচিন্তিতভাবে তা লিপিবদ্ধ করেন। যার প্রেক্ষিতে বর্তমানকালে মানুষ কথা বলা, উপস্থাপন ইত্যাদি বিষয়ে ভাষার যৌক্তিকতা ও দুর্বলতা খুঁজে পায়। অর্থাৎ যুক্তিবিদ্যার পাঠ ব্যবহারিক জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে ও ভ্রান্তি পরিহার করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।