মিতা দর্শন বিষয়ে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ক্লাসে প্রথম দিন প্রফেসর আহমেদ দর্শনের একটি সংজ্ঞা দিয়ে পড়ানো শুরু করলেন। বিষয়টি মিতার মনে সংশয় সৃষ্টি করে। সে দাঁড়িয়ে শিক্ষককে প্রশ্ন করে, স্যার, আমরা কেন প্রথমেই দর্শনের সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করছি? তা ছাড়া সংজ্ঞায় কোন কোন বিষয়ের উল্লেখ থাকতে হয়, তা আমরা কেমন করে বুঝব? কারণ, আমরা তো সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ভুলও করতে পারি। স্যার এর উত্তরে বললেন, শুধু দর্শন নয়, যেকোনো বিষয়ের আলোচনার শুরুতে তার একটা সংজ্ঞা দিতে হয়। কারণ সংজ্ঞার মাধ্যমে বিষয়টি কোন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত এবং এর মধ্যে বিশেষ কী গুণ থাকার কারণে তা অন্যান্য বিষয় থেকে স্বতন্ত্র, তা জানা যায়। তবে যেকোনোভাবে সংজ্ঞা দেওয়া যায় না। সংজ্ঞার কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ না করলে বা নিয়মগুলোর অপপ্রয়োগ ঘটলে সংজ্ঞা ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
যৌক্তিক সংজ্ঞা প্রদানের ক্ষেত্রে কতিপয় নিয়ম পালন করতে হয়, যেগুলোর যথার্থ ও সঠিক প্রয়োগে সংজ্ঞা শুদ্ধ হয়। আবার এই নিয়মগুলোর অপপ্রয়োগ বা লঙ্ঘনে সংজ্ঞা ত্রুটিপূর্ণ হয়ে বিভিন্ন অনুপপত্তি সংঘটিত করে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো পদের সংজ্ঞায় জাত্যর্থের অতিরিক্ত কোনো গুণের উল্লেখ করা হলে এবং এই অতিরিক্ত গুণটি যদি সংশ্লিষ্ট পদের অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ হয়, তাহলে প্রদত্ত সংজ্ঞাটিতে আপতিক বা অবান্তর লক্ষণজনিত সংজ্ঞানুপপত্তি ঘটবে; যেমন: 'মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন দ্বিপদ জীব।' এখানে 'দ্বিপদ' গুণটি হচ্ছে মানুষ পদের অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ, যা মানুষের সংজ্ঞায় অতিরিক্ত হিসেবে যুক্ত হওয়ায় সংজ্ঞাটিতে অবান্তর লক্ষণজনিত সংজ্ঞানুপপত্তি ঘটেছে। বস্তুত 'অবিচ্ছেদ্য' হচ্ছে এমন বিষয়, যা একটি শ্রেণির সকলের মধ্যেই সমানভাবে বিদ্যমান থাকে। আর 'অবান্তর লক্ষণ' হচ্ছে এমন গুণ, যা সেই শ্রেণির জন্য অপরিহার্য নয়। এরূপ গুণ সংজ্ঞায় ব্যবহৃত হলে সংজ্ঞা ভ্রান্ত হতে বাধ্য; যেমন: উপরের দৃষ্টান্ত অনুসারে মানুষের জন্য তার দুই পা থাকা অপরিহার্য নয়। কারণ দুই পা না থাকলে মানুষকে মানুষ বলা যাবে না, এমন নয়। অর্থাৎ পা ছাড়াও মানুষ মানুষ হিসেবে পরিচিত হতে পারে। কাজেই সংজ্ঞায় দ্বিপদ গুণের সংযুক্তি একটি অবান্তর বিষয়মাত্র। অতএব বলা যায়, সংজ্ঞার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুনগুলো যেমন প্রয়োজন, তেমনি এ নিয়মগুলোর অপপ্রয়োগ এড়িয়ে সংজ্ঞাকে অনুপপত্তির আশঙ্কামুক্ত করাও অপরিহার্য। তা না হলে সংজ্ঞা ভ্রান্ত হয়, যা থেকে উদ্ভদ্ধ ঘটে অনুপপত্তির।