শফিক ও কবির দুই বন্ধু একদিন বোটানিক্যাল গার্ডেনে বেড়াতে গিয়েছে। সেখানে অসংখ্য গাছপালার সমাহার দেখে শফিক কবিরকে প্রশ্ন করল, "কবির, বলতো উদ্ভিদ কী?” উত্তরে কবির বলল, "উদ্ভিদ হচ্ছে গাছপালা, লতা, গুল্ম ইত্যাদি, যেগুলো থেকে আমরা ফুল, ফল, খাদ্যশস্য পাই, যেগুলো আমাদের ছায়া দেয়, সৌন্দর্যবর্ধন করে এবং সর্বোপরি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।" কবিরের কথা শুনে শফিক বলল, "তুমি উদ্ভিদ সম্পর্কে যা বলেছ, তা থেকে আমি উদ্ভিদ সম্পর্কে কোনো স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্পষ্ট ধারণা পাইনি। তাছাড়া তোমার কথা থেকে উদ্ভিদ কোন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত এবং এতে এমন কী বিশেষ গুণ আছে, যা উদ্ভিদের স্বাতন্ত্র্য নির্দেশ করে, তা বোঝা যায়নি। কারণ তুমি উদ্ভিদের বর্ণনা দিয়েছ। কিন্তু তুমি যদি উদ্ভিদের সংজ্ঞা দিতে, তাহলে বিষয়টি স্পষ্টভাবে বোঝা যেত।”
উদ্দীপকে কবির উদ্ভিদের সংজ্ঞা না দিয়ে বর্ণনা দিয়েছে, যা শফিকের চাহিদা ছিল না। মূলত সংজ্ঞা হলো কোনো পদের সম্পূর্ণ জাত্যর্থের সুস্পষ্ট বিবৃতি। আর জাত্যর্থ গঠিত হয় সংশ্লিষ্ট পদের আসন্নতম জাতি ও বিভেদক লক্ষণ দ্বারা। বিভেদক লক্ষণ হচ্ছে পদের আবশ্যিক ও অনিবার্য গুণাবলি। সে ক্ষেত্রে একটি পদের সংজ্ঞার মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট পদের আবশ্যিক ও অনিবার্য গুণাবলির প্রকাশ ঘটে।
শফিক কবিরকে প্রশ্ন করেছিল, 'উদ্ভিদ কী?' যার উত্তর হতে পারত এমন, "যা মাটি ভেদ করে উপরে ওঠে এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে তা- ই উদ্ভিদ।” কিন্তু এমন না হয়ে কবির তার উত্তরে বলেছে, উদ্ভিদ হচ্ছে গাছপালা, লতা, গুল্ম ইত্যাদি। যেগুলো থেকে আমরা ফুল, ফল, খাদ্যশস্য পাই, যেগুলো আমাদের ছায়া দেয়, সৌন্দর্যবর্ধন করে এবং সর্বোপরি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। অর্থাৎ কবির উদ্ভিদের সংজ্ঞা না দিয়ে উদ্ভিদের বর্ণনা প্রদান করেছে। বর্ণনা বলতে জাত্যর্থ বহির্ভূত অন্য সব গুণের প্রকাশকে বোঝায়। অর্থাৎ যেসব পদের উপলক্ষণ, অবান্তর লক্ষণ ইত্যাদি গুণ বা বৈশিষ্ট্যের বিবৃতি থাকে, তাকেই বর্ণনা বলে। উক্ত বর্ণনায় বলা হয়েছে, উদ্ভিদ বলতে বোঝায় গাছপালা, লতা, গুল্ম ইত্যাদি, যা উদ্ভিদের অবান্তর লক্ষণ। অতএব বলা যায়, কবির উদ্ভিদের বর্ণনা দিয়েছে, সংজ্ঞা নয়।