অদিতি আজ তার ঘরে বসে যুক্তিবিদ্যার একটি বিষয় খুবই মনোযোগের সাথে পড়ছে। এমন সময় পাশের বাড়ির এক কাকা এসে তার পড়ার বিষয়গুলো ভালোভাবে লক্ষ করে তার জ্ঞানের পরিধি যাচাই করার জন্য দুটি উদাহরণ দিলেন-
মানুষ হয় এক প্রকার বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব।
মানুষ হয় এক প্রকার পক্ষপাতহীন দ্বিপদ জীব।
তারপর তিনি বললেন, এ দুটি উদাহরণের মাধ্যমে তুমি কী বুঝতে পারলে? বিষয়টি সম্পর্কে অদিতির ধারণা স্পষ্ট নয় বুঝে তিনি অদিতিকে এ সম্পর্কিত জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করেন।
উদ্দীপকে উল্লিখিত উদাহরণ দুটির মধ্যে প্রথম উদাহরণ, অর্থাৎ 'মানুষ হয় এক প্রকার বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব' বাক্যটি হচ্ছে যৌক্তিক সংজ্ঞা এবং দ্বিতীয় উদাহরণ অর্থাৎ 'মানুষ হয় পক্ষপাতহীন দ্বিপদ জীব" হচ্ছে একটি অনুপপত্তি।
যৌক্তিক সংজ্ঞার প্রথম নিয়মানুযায়ী সংজ্ঞায় একটি পদের সম্পূর্ণ জাত্যর্থকে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হবে, এর অধিক হলে অনুপপত্তির সৃষ্টি হতে পারে। উক্ত প্রথম উদাহরণটি এই নিয়মটি যথাযথভাবে পালন করে বলে যৌক্তিক সংজ্ঞার নিয়ম অনুযায়ী এটি যথার্থ সংজ্ঞা। কারণ মানুষ পদের পূর্ণ জাত্যর্থ হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তি ও জীববৃত্তি। আর এই দুটি গুণই উক্ত প্রথম উদাহরণ অর্থাৎ 'মানুষ হয় এক প্রকার বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব।'- এ ব্যক্ত করা হয়েছে। তাই এটি একটি সঠিক ও যথার্থ যৌক্তিক সংজ্ঞার উদাহরণ।
অন্যদিকে দ্বিতীয় উদাহরণটি অর্থাৎ 'মানুষ হয় একপ্রকার পক্ষপাতহীন দ্বিপদ জীব' দ্বারা উক্ত নিয়মটির লঙ্ঘন হয়েছে। কারণ এই উদাহরণে মানুষ পদের পূর্ণ জাত্যর্থ ব্যক্ত না হয়ে এর অতিরিক্ত গুণ হিসেবে 'দ্বিপদ' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যা হচ্ছে 'মানুষ' পদের অবিচ্ছেদ্য অবান্তর লক্ষণ। তাই এ ক্ষেত্রে অবান্তর লক্ষণ নামক সংজ্ঞা অনুপপত্তি ঘটেছে।
অর্থাৎ দুটি উদাহরণ বিশ্লেষণ করলে একটিকে আরেকটির বিপরীত উদাহরণ বলে ধরা যায়। কারণ একটি যে নিয়ম অনুসরণ করে সঠিক ও যথার্থ সংজ্ঞা প্রদান করে, অন্যটি উক্ত নিয়ম লঙ্ঘন করে ভুল সংজ্ঞা প্রদান করে। তাই বলা যায়, প্রথমটি হচ্ছে যৌক্তিক সংজ্ঞার উদাহরণ, আর অন্যটি হচ্ছে নিয়ম লঙ্ঘনজনিত অনুপপত্তি।