অফিস থেকে ফিরে মি. শাহিন তার স্ত্রীকে বললেন, "মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন প্রাণী। এ কথা এক সময় বলা হলেও আজকাল আর বলা হয় না। আমার মনে হয়, সবাই আমরা পশুর মতো হয়ে যাচ্ছি। আমাদের বিবেক-বুদ্ধি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।" উত্তরে স্ত্রী বললেন, "মানুষ হয় হাত, পা, চোখ, কানবিশিষ্ট প্রাণী। তাছাড়া মানুষ হাসতে জানে, গাইতে জানে এবং নাচতেও জানে। মানুষের ক্ষুধা ও তৃষ্ণা আছে।"
উদ্দীপকে মি. শাহিনের বক্তব্যটি হলো সংজ্ঞা এবং তার স্ত্রীর বক্তব্যটি হলো বর্ণনা। নিচে সংজ্ঞা ও বর্ণনার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হলো-
সংজ্ঞার আলোচ্য বিষয় হচ্ছে 'পদ'। আর বর্ণনার আলোচ্য বিষয় হচ্ছে 'বস্তু'। অর্থাৎ একটি পদকে সংজ্ঞায়িত করা হয়; অন্যদিকে কোনো বস্তুর স্বরূপকে বর্ণনা করা হয়। সংজ্ঞার ক্ষেত্রে সংজ্ঞেয় ও সংজ্ঞার্থের ব্যক্তর্থকে সমপরিমাণ হতে হয়। কিন্তু বর্ণনার ক্ষেত্রে এরূপ কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অর্থাৎ বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রকৃত বিষয় ও তার বর্ণনার পরিমাণ কম বা বেশি হতে পারে। সংজ্ঞা সর্বদা সুনির্দিষ্ট হয় অর্থাৎ একটি পদের সংজ্ঞা স্থান- কাল-পাত্রভেদে একই রকম থাকে। কিন্তু বর্ণনার বিষয় বিভিন্ন রূপ হতে পারে অর্থাৎ একটি বিষয়ের বর্ণনা স্থান- কাল-পাত্রভেদে বিভিন্ন রকমের হতে পারে।
সংজ্ঞা হচ্ছে একটি সংক্ষিপ্ত প্রক্রিয়া; অর্থাৎ সংজ্ঞার মাধ্যমে একটি পদের সম্পূর্ণ স্বরূপকে সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে বর্ণনার কোনো নির্দিষ্ট বিস্তৃতি নেই; যেমন: মানুষের সংজ্ঞা একটি বাক্যের মাধ্যমে দেওয়া গেলেও এর বর্ণনায় একাধিক বাক্য ব্যবহৃত হতে পারে। সংজ্ঞা কেবল সামান্য বা শ্রেণিবাচক পদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। কিন্তু বর্ণনা সামান্য, বিশিষ্ট বা একক সব ধরনের বস্তুর ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা যায়। সংজ্ঞা সংক্ষিপ্ত হলেও তা হচ্ছে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রক্রিয়া। অন্যদিকে বর্ণনার আকার বিস্তৃত হলেও তা হচ্ছে একটি অসম্পূর্ণ প্রক্রিয়া। সংজ্ঞার মাধ্যমে একটি বিষয়ের তাত্ত্বিক রূপ ব্যক্ত হয়; এজন্য এটি হচ্ছে একটি বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া। পক্ষান্তরে বর্ণনা হলো একটি লৌকিক প্রক্রিয়া। কারণ এর ব্যবহার কেবল সাধারণ মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
কোনো পদের সংজ্ঞা প্রদানের ক্ষেত্রে কতিপয় নিয়ম পালন করতে হয়; এজন্য সংজ্ঞা প্রদানের ক্ষেত্রে সংজ্ঞা প্রদানকারীর এসব নিয়ম সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হয়। কিন্তু বর্ণনার ক্ষেত্রে এরূপ কোনো নিয়ম পালন করতে হয় না; এজন্য যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো বিষয়ের বর্ণনা প্রদান করতে পারে। উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, উদ্দীপকে মি. শাহিন ও তার স্ত্রীর বক্তব্যের অর্থাৎ সংজ্ঞা ও বর্ণনার তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, তাদের উভয়ের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে।