অন্যের জমিতে কাজ করে কোনোমতে সংসার চালান আসগর মিয়া। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় তিনি কোনো কাজ পান না। তখন সন্তানদের নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটে তার। এমনকি পড়াশোনার জন্য তাদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারেন নি। সম্প্রতি তার স্ত্রী কুলসুম একটি এনজিও থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে একটি গাভী কিনেছেন। এনজিওটি দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনাও শেখায়। রহিমা সন্তানদের সেখানে ভর্তি করিয়েছেন।
আসগর আলীর অবস্থা বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা বেকারত্বের প্রতিফলন।
কোনো ব্যক্তি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আয় ও উপার্জনমূলক কাজে নিয়োজিত হতে না পারলে তাকে বেকার বলে। বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশে বেকারত্বের পিছনে বহুবিধ কারণ বিদ্যমান। বেকারত্বের প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত জনসংখ্যা। এদেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে সেই হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। এছাড়া এদেশের কৃষি ব্যবস্থা আধুনিক না হওয়ায় বছরেএকসময় ফসল হলে অন্য সময় জমি পতিত অবস্থায় থাকে। ফলে মৌসুমি বেকারত্ব সৃষ্টি হয়। একই সাথে এদেশে পর্যাপ্ত শিল্পায়ন না হওয়ায় কর্মসংস্থানের তেমন সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। ফলে বেকারত্ব বাড়ছে।
এছাড়া প্রচলিত সনাতন পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা বেকারত্বের অন্যতম কারণ। একদিকে কর্মসংস্থান না থাকা, অন্যদিকে কারিগরি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাবে শিক্ষার্থীরা যোগ্যতা অনুসারে কাজ পায় না। ফলে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পায়। আবার ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে অনেকেই জমি-জমা হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়ে। এতে বেকারত্ব বাড়ে। এছাড়াও সামাজিক মূল্যবোধ ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রভৃতি কারণেও এদেশে বেকারত্ব সৃষ্টি হয়। উদ্দীপকের আসগর আলী অন্যের জমিতে কাজ করলেও বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় কোনো কাজ পান না। তার এ অবস্থার মাধ্যমে এদেশে বিরাজমান বেকার পরিস্থিতিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর এদেশে বেকারত্ব সৃষ্টির পিছনে ওপরে বর্ণিত কারণগুলো দায়ী।