রুবিনা সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিন বছর আগে ছোট ছেলে আতিককে দেখাশোনা করার জন্য তিনি বিথি নামের ১৩ বছরের একটি মেয়েকে বাসায় আনেন। মেয়েটি বাসায় আসার পর থেকে রুবিনা বেশ কিছু জিনিস খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অর্থাৎ বিথি তার জিনিসগুলো চুরি করে সরিয়ে রাখত। একদিন রুবিনার গয়নার ওপর বিথির লোভহলো সুযোগ বুঝে সে গয়নাগুলো চুরি করল। ছোট্ট আতিক বিষয়টি দেখে ফেলে এবং মাকে বলে দেবো বলে চিৎকার করে। তাই বিথি বটি দিয়ে আতিকের মাথায় আঘাত করে গয়না নিয়ে পালিয়ে যায়। বাসায় এসে ছেলের মরদেহ দেখে শোকে পাগল প্রায় রুবিনা সরকার।
বিথির মতো অপরাধীদের সংশোধন ও উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের মাধ্যমে বেশকিছু কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
অনুর্ধ্ব-১৬ বছরের অপরাধীদের আচরণ সংশোধন এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে কিশোর-কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ কেন্দ্র আইনের সংস্পর্শে আসা ও অপরাধের সাথে জড়িত কিশোর-কিশোরীদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে সমাজে পুনর্বাসন করে। বিথির মতো অপরাধীরাও এ কার্যক্রমেরই আওতাভুক্ত।
বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালের শিশু আইন এবং ১৯৭৬ সালের জাতীয় শিশু নীতিমালার ভিত্তিতে ১৯৭৮ সালে গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে কিশোর-কিশোরী সংশোধনী প্রতিষ্ঠান (২০০ আসন বিশিষ্ট) স্থাপন করে। এছাড়া গাজীপুরের কোনাবাড়িতে ২০০২ সালে ১টি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র এবং ১৯৯২ সালে যশোরের পুলের হাটে ১টি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ সব কেন্দ্রে আগত ও অবস্থানরত শিশুদের আবাসন, সংশোধন, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে শাস্তি দেওয়ার জন্য নয় বরং সংশোধনের জন্য কিশোরদের গ্রহণ করা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীর মাধ্যমে কিশোর অপরাধীরা যাতে প্রভাবিত এবং হয়রানির শিকার না হয় এজন্য তাদেরকে আটক নিবাসে আলাদা রাখা হয়।
কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রগুলো কিশোর অপরাধীদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, আচরণগত সংশোধন ও উন্নয়নেও কাজ করে। যথোপযুক্ত ক্ষেত্রে দক্ষতা উন্নয়নভিত্তিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং সংশোধনে পরামর্শমূলক নানাবিধ সেবা প্রদান করে। এর মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক বিচ্যুত কিশোর-কিশোরী শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত হয়ে সমাজে পুনর্বাসিত হয়েছে।
উপরের আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়, বিথির মতো কিশোর অপরাধীদের সংশোধন ও উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক কর্মসূচি পরিচালনা করছে।