দশ বছর বয়সের ললিতা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে চকলেট বিক্রি করে। এতে যে রোজগার হয় তা দিয়ে অসুস্থ বাবা-মায়ের ওষুধ ও খাবারের যোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই সে কর্মজীবী শিশুদের জন্য স্থাপিত একটি স্কুলে ভর্তি হলো। চকলেট বিক্রি করার পর সে স্কুলে যায়। ললিতার ভর্তি হওয়া স্কুলে ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ললিতার ইচ্ছা পড়াশোনা করে নিজেকে দেশের দক্ষ মানবশক্তিতে পরিণত করবে।
বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে। তাদের সব দুঃখ দূর করে দেবে।
ললিতা বাংলাদেশে কর্মরত বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান ইউসেপের আওতায় পড়াশোনা করছে।
নিউজিল্যান্ডের নাগরিক Mr. Lindsay Allan Cheyne নামক একজন সমাজসেবকের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে UCEP যাত্রা শুরু করে। এদেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে এ প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে; ললিতার ক্ষেত্রে যার আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে।
দশ বছর বয়সের ললিতা চকলেট বিক্রি করে তার পরিবারের সব প্রয়োজন মেটাতে পারছিল না। তাই সে বড় হয়ে বেশি অর্থ রোজগারের স্বপ্ন দেখল। এ স্বপ্ন পূরণের জন্য সে কর্মজীবী শিশুদের পড়াশোনার সুযোগ করে দেয় এরকম একটি স্কুলে ভর্তি হয়। এ স্কুলটি ব্যবহারিক শিক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। উদ্দীপকের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউসেপকেই ইঙ্গিত করে। কারণ শহর এলাকায় বসবাসরত ১০-১৪ বছরের শ্রমজীবী কিশোর-কিশোরী এবং যাদের অধিকাংশই বিভিন্ন বস্তিতে বাস করে, তাদেরকে কেন্দ্র করে ইউসেপের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্যভুক্ত বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরীই গৃহভৃত্য, ফেরিওয়ালা, খবরের কাগজ বিক্রেতা, হোটেল বয়, রিক্সাচালক, কাঁচামাল বিক্রেতা, ওয়ার্কশপ হেলপার ইত্যাদি হিসেবে কাজ করে। ইউসেপ এসব ছেলে-মেয়েদেরপ্রথমত ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা প্রদান করে। তারপর মেধা অনুযায়ী তাদেরকে নিজস্ব কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ দেয়। ইউসেপ প্রথমত কমিউনিটি স্কুলের মডেল অনুযায়ী ভাসমান কর্মজীবী শিশুদের জন্য বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেছিল, পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে একটি কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন করে। বর্তমানে বেশির ভাগ বিভাগীয় শহরে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সুতরাং বোঝা যায়, ললিতার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ইউসেপের আওতাভুক্ত।