মীম বাবার সাথে চিড়িয়াখানা ঘুরে খুব আনন্দ উপভোগ করে। বাবাকে সে বলল, বাঘ, সিংহ, হরিণ ইত্যাদি প্রাণীগুলো একদিকে আর শালিক, তোতা ও ময়না ইত্যাদি পাখিগুলো অন্যদিকে দেখে ভালো লেগেছে। উত্তরে বাবা বললেন, প্রাণীগুলো ইচ্ছা করলে মেরুদণ্ডী ও অমেরুদণ্ডী এ দু'ভাগেও সাজানো যেতে পারে।
উদ্দীপকে মীম এর বক্তব্যে শ্রেণিকরণের যে রূপটি প্রকাশ পেয়েছে তা হলো কৃত্রিম শ্রেণিকরণ। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো-
সাধারণত ব্যবহারিক সুবিধা বা বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গুরুত্বহীন ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে জাগতিক বস্তু বা ঘটনাবলি বিভিন্ন শ্রেণিতে বিন্যস্ত করার মানসিক প্রক্রিয়াকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বলা হয়। বস্তুত কৃত্রিম শ্রেণিকরণে কোনোরূপ প্রাকৃতিক বা বৈজ্ঞানিক নিয়ম অনুসরণ করা হয় না, এজন্য একে অবৈজ্ঞানিক শ্রেণিকরণ বলা হয়। এছাড়া এ ধরনের শ্রেণিকরণের ভিত্তি হচ্ছে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন। তাই এরূপ শ্রেণিকরণকে বিশেষ শ্রেণিকরণও বলা যায়। মূলত ব্যবহারিক বা প্রায়োগিক সুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে এরূপ শ্রেণিকরণের প্রধান কাজ। তাই একে ব্যবহারিক শ্রেণিকরণ ও প্রায়োগিক শ্রেণিকরণ নামেও অভিহিত করা হয়। সর্বোপরি এ জাতীয় শ্রেণিকরণকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বলা হয় এজন্য যে, এক্ষেত্রে শ্রেণিকরণে প্রাকৃতিক বা বৈজ্ঞানিক কোনো নীতি অনুসরণ না করেই সাদৃশ্যের মৌলিক, গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য বিষয়সমূহকে বাদ দিয়ে ব্যক্তিবিশেষের ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও ব্যবহারিক সুবিধা অনুযায়ী কতগুলো বাহ্যিক ও গুরুত্বহীন সাদৃশ্যকে শ্রেণিকরণের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো গ্রন্থাগারের গ্রন্থসমূহকে আকৃতিগত, বিষয়বস্তুগত বা ভাষাগত সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বিন্যস্তকরণই হচ্ছে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ। এরূপ শ্রেণিকরণের মাধ্যমে সর্বসাধারণের জ্ঞান অর্জিত হয় না, তবে এর মাধ্যমে গ্রন্থাগারিক এবং গ্রন্থ ও গ্রন্থাগারের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিবর্গের উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয় বা ব্যক্তিগত সুবিধা অর্জিত হয়। এক্ষেত্রে গ্রন্থের শ্রেণিবিন্যাসটি কৃত্রিম এজন্য যে, এখানে সাদৃশ্যের বিষয় হিসেবে গ্রন্থের আকৃতি, বিষয়বস্তু বা ভাষা প্রকৃতি প্রদত্ত নয়, বরং এগুলো মানুষের মনগড়া ও ইচ্ছামতো নেওয়া গুরুত্বহীন ও বাহ্যিক সাদৃশ্য। বস্তুত এ জাতীয় সাদৃশ্য ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে, বিধায় কৃত্রিম শ্রেণিকরণ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হতে পারে।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, উদ্দীপকে মীম এর বক্তব্যে শ্রেণিকরণের যে রূপটি প্রকাশ পেয়েছে তা হলো কৃত্রিম শ্রেণিকরণ।