তথ্য-১: মিঃ সাইদ বৃক্ষপ্রেমী মানুষ। বাড়ীর আঙ্গিনায় ফলের ও ফুলের বাগান করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি ফলের গাছগুলো একদিকে ও ফুলের গাছগুলো অন্যদিকে লাগিয়েছেন যাতে তার কাজের সুবিধা হয়।
তথ্য-১: মিঃ সাইফ প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। তিনি তার বাড়ীর আঙ্গিনায় বিভিন্ন রকমের গাছ লাগিয়েছেন। তার বাগানে ঘুরলে সপুষ্পক ও অপুষ্পক -এই দুই শ্রেণির উদ্ভিদ দেখা যায়।
উদ্দীপকে তথ্য-১ অনুসারে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ এবং তথ্য-২ অনুসারে প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ এর পার্থক্য নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
১। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণে কতগুলো মৌলিক, গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বিষয়বস্তুর শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। আর কৃত্রিম শ্রেণিকরণে কতগুলো অবান্তর, গুরুত্বহীন ও বাহ্যিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বিষয়বস্তু বিভিন্ন শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা হয়।
২। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধারণ জ্ঞান বা বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করা। পক্ষান্তরে কৃত্রিম শ্রেণিকরণের উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবহারিক বা বিশেষ সুবিধা লাভ করা। এককথায় প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ হলো বাস্তব ঘটনাসংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের উৎস। আর কৃত্রিম শ্রেণিকরণ হলো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য সিদ্ধির উৎস।
৩। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণে প্রকৃত বা অপরিহার্য সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বিষয়বস্তুর শ্রেণিবিন্যাস করা হয় বলে এরপ শ্রেণিকরণ ব্যক্তিভেদে অভিন্ন হয়ে থাকে। অন্যদিকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণে অবান্তর সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বিষয়বস্তুর শ্রেণিবিন্যাস করা হয় বলে এরপ শ্রেণিকরণ অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তিভেদে ভিন্ন আকার ধারণ করে থাকে।
৪। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সর্বজনীন উদ্দেশ্য সাধিত হয়। অপরপক্ষে কৃত্রিম শ্রেণিকরণের মাধ্যমে ব্যক্তিবিশেষের বা সীমিতসংখ্যক ব্যক্তির বিশেষ বা ব্যবহারিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয়।
৫। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ' হচ্ছে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। এজন্য এ পদ্ধতি সব মানুষ সমভাবে ব্যবহার বা প্রয়োগ করতে পারে। অন্যদিকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ হচ্ছে একটি লৌকিক প্রক্রিয়া। এজন্য এ প্রক্রিয়ার ব্যবহার ও প্রয়োগ সব মানুষ একভাবে করতে পারে না, বরং এর ব্যবহার ও প্রয়োগ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।
৬। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ হচ্ছে সংজ্ঞাভিত্তিক। কারণ সংজ্ঞার ক্ষেত্রে যা অনিবার্য গুণ, প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণে তা-ই গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্যের বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। অন্যদিকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ হচ্ছে নমুনাভিত্তিক।
৭। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে সম্পর্কিত। কেননা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার দুটি অন্যতম পদ্ধতি-সংযুক্তকরণ ও অন্তর্ভুক্তকরণ প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ প্রক্রিয়ায়ও প্রয়োগযোগ্য। অপরদিকে কৃত্রিম শ্রেণিকরণ লৌকিক ব্যাখ্যার সাথে সম্পর্কিত।
৮। প্রাকৃতিক শ্রেণিকরণ যৌক্তিক বিভাগের সাথে সম্পর্কিত, কারণ উভয়ই জাতি বা শ্রেণির সাথে জড়িত। পক্ষান্তরে কৃত্রিম শ্রেণিকরণের সাথে যৌক্তিক এরূপ কোনো সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয় না।
সুতরাং উপরের আলোচনার আলোকে বলা যায়, প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম শ্রেণিকরণ একে-অপরের থেকে আলাদা।